নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ২০০২ সাল! বিগত ১৭ বছর ধরে সবরমতী নদী দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল! নদী থেমে থাকে না। তাই গুজরাত দাঙ্গার বীভৎসতার দুই ছবি স্মৃতির ক্যানভাস থেকে একটু একটু করে মুছে আঁকা হল এক ভিন্ন ধরনের ছবি। ফ্ল্যাশ ব্যাকে গেলে দেখা যাবে সেই ভিন্ন ধরনের দুই ছবি। একদিকে অশ্রুসজল চোখে প্রাণভিক্ষার কাতর আর্জি কুতুবউদ্দিন আনসারির। অন্যদিকে, কপালে গেরুয়া ফেট্টি বেঁধে তলোয়ার হাতে আস্ফালন অশোক পারমারের।
এই ছবি কঠিন হৃদয়ের মানুষের বিবেককেও নাড়িয়ে দিয়েছিল। এর পরের ছবিটি ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর শুক্রবারের। আহমদাবাদে নিজের জুতোর দোকানের উদ্বোধনের জন্য এক সময়ের গুজরাত দাঙ্গার আইকন অশোক পারমার বেছে নিলেন কিন্তু আনসারিকেই। যে গুজরাত দেখেছিল মানুষের বীভৎসতা, সেই গুজরাত জুম্মাবারে সাক্ষী থাকল সম্প্রীতির অটুট বন্ধনের।
আমূল বদলে নিয়েছেন নিজেকে পারমার। জানালেন, অল্প বয়সে বড় অন্যায় করে ফেলেছিলাম। আজ আমি অনুতপ্ত। ধর্মীয় ভোদাভেদ, দাঙ্গা মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। আর সেটা মনে রেখেই দোকানের নাম ‘একতা’। এ দিন দোকানের উদ্বোধনের পর আনসারিকে জড়িয়ে ধরেন পারমার। তখন দু’জনেই চোখের জলে ভাসছেন। সবাই বুঝলেন, ক্যানভাসে বিভেদের ছবি, আসল নয়।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে কালিম সিদ্দিকী নামে কেরলের এক বামপন্থী নেতার সান্নিধ্যে আসার পরই তাঁর জীবনের দর্শন বদলে যায়। পারমার বলেন– তাঁর বাবা জুতো সারাইয়ের কাজ করতেন। আহমদাবাদে রাস্তার ফুটপাথে তাঁদের দোকান ছিল। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁরা বাবা মারা যান। ফলে সংসারের দায়িত্ব তার উপর এসে পড়ে। ধরে নেন বাবার পেশাকেই।
শুক্রবার আহমদাবাদের দিল্লি দরওয়াজা এলাকায় পারমারের জুতোর দোকান ‘একতা চপ্পল ঘর’- কুতুবউদ্দিন আনসারির হাত ধরে দেখল নতুন সকাল। আনসারি বলেন– ‘আমি খুশি যে অশোক ভাইয়ের জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হল আজ।’ পরে সাংবাদিকদের এক পশ্নের জবাবে পারমার বলেন, ২০০২ সালের বীভৎসতা যত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া যায় ততই ভালো। বাঁচার জন্য একতাই একমাত্র পথ। আবার দেখা গেল কুতুব উদ্দিন ও আনসারিকে একই ক্যানভাসে, কিন্তু ছবিটা পাল্টে গেল!
পি/ব
No comments:
Post a Comment