বৃষ্টি ভিলেন আনন্দবাজারে, তাই আনন্দধারা বহিল না শান্তিনিকেতনে - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday, 28 September 2019

বৃষ্টি ভিলেন আনন্দবাজারে, তাই আনন্দধারা বহিল না শান্তিনিকেতনে




দেবশ্রী মজুমদারঃ     আনন্দধারা বৃষ্টির ধারায় বাধা পেল! শুরু হতেই বৃষ্টি! বৃষ্টি ভিলেন এবারের আনন্দবাজারে!  সে যাই হোক, এই আনন্দবাজার নিয়ে মানুষের উৎসাহের খামতি নেই!  বৃষ্টি হলে যেমন খেলার ধারা বিবরণী বন্ধ হয়ে রেকর্ডেড খেলা দেখানো হয়, তেমনি পুরানো কাসুন্দি নিয়েই কিছু কথা শোনা গেল বিশ্বভারতীর অন্দরে!  এমন নামের দোকান পসরা নাকি তিন ভূবনে মেলে নি এ্যদ্দিন! কি চান? শিঙারা? – চলে যান ত্রিসিংহধারিণী স্টলে।



শিঙারার নাম ত্রিসিংহধারিণী। ভেবে দেখুন শিঙাড়ার তিনটি শিং আছে। চা খাবেন? চলে যান আনন্দধারায়।  চায়ে মন না ভরলে, কফি খান। তবে কফি নয়, সোমরস চাইবেন। অতি সাধারণ খাবারকে, অদ্ভুত নাম দিয়ে অসাধারণ এবং রহস্যের মোড়কে বানিয়ে তোলার কারিগর বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারাই। আর সেটা তারাই পারে!   আনন্দবাজারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার, দোকানের নামকরণ। নাম হতে হবে এমন, যা দেখে দোকানের প্রতি সকলের একটা স্বাভাবিক  কৌতুহল জাগবে। তবেই না আনন্দবাজার! এবার বৃষ্টির জন্য মাঝে একটু ছন্দপতন হলেও,  রসিক প্রকৃতি সামলে নেয় নিজেকে! নিয়ম মাফিক কিছুক্ষণ নাট্যঘরে।



 তারপর যথারীতি গৌরপ্রাঙ্গণে! সকালের দিকে ঢাক বাজিয়ে দোকানের কাজ চলছে। পড়ুয়ারা ঢাকের তালে নাচছে! তখন থেকে আনন্দ শুরু!    আনন্দবাজার কবে থেকে শুরু হয় তার দিনক্ষণ জানা নেই। বলা যায় রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় এই আনন্দবাজারের প্রচলন।   সালটা সম্ভবতঃ  ১৯১০-১১।  ১৯১৯ সালে এক মজার ঘটনার কথা জানা যায়।   ছেলেরা করেছে সীতার পদধূলি, রামের ধনুক, চণ্ডীদাসের হস্তাক্ষর। এইসবের মিউজিয়াম।  “সীতার পদধূলি” নাম প্রসঙ্গে  বিশ্বভারতীর অধ্যাপিকা সবুজ কলি সেনের কাছে জানা যায়, ১৯১৯ সালের ঘটনা। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক। 






রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে সীতাদেবী।  সেই নামে মিউজিয়ামের নাম “সীতার পদধূলি”। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ডেকে বলেছিলেন, “তোর পদধূলি দেখে এলাম”। কি মজার না! ভাবতেও গায়ে শিহরণ জাগে। একই ভাবে,  মিউজিয়ামের নাম “ চণ্ডীদাসের হস্তাক্ষর”।   এ সেই বিখ্যাত বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস নন। আশ্রমে চণ্ডীদাস নামে এক পাচক কাজ করতেন তখন। তাঁর হাতের লেখা। তাই  সেই নামেই মিউজিয়াম।  এখনও সেই পরম্পরা আছে।  যেমন  এখন খাবারের দোকানের নাম “খাইবার পাস”। এই খাইবার পাস,  পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের সীমায় গিরিপথ নয়। এখানে “ খাইবারে চাইলে ওই পাশে যাইতে পারেন”। 



আজও  পাঠভবের সামনে গৌরপ্রাঙ্গণের মাঠে বসে আনন্দবাজার।  পাঠভবনের ক্লাস ফোর থেকে দ্বাদশ শ্রেণী এবং  সঙ্গীত ভবন ও কলাভবনের মত বিশ্বভারতীর অন্য ভবনের সব বিভাগের  ছাত্রছাত্রীরা এই আনন্দ মেলায় অংশগ্রহণ করে। স্টলের সংখ্যা নেহাত কম নয়।  নিজেদের তৈরী সম্ভার নিয়ে বসে। এবং তা থেকে যে আয় হয়, সেটা চলে যায় বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেই সেবা বিভাগ থেকে বিশ্বভারতীর আশেপাশের গ্রামের দুঃস্থ মানুষের মধ্যে কম্বল, কাপড়জামা বা খাবার বিতরণ করে থাকে। যদিও এবার তার অবকাশ নেই।  মহালয়ের দিন শুরু। একদিনের মেলা। এক কথায় ঘণ্টা তিনেকের মেলা। বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয়।


এই মেলার প্রস্তুতি অনেকদিনের।  মারবেল পেপার দিয়ে স্টল সাজানো। এসবের একটা প্রস্তুতি থাকে।  তাছাড়া, একমাস দেখা হবে না। তাই হবে এই মেলা ঘিরে চুটিয়ে আনন্দ থাকে। কিন্তু এবার বৃষ্টি ভিলেন,  বলে জানান, এক পড়ুয়া।   তিনি জানান, এই আনন্দ মেলা বা আনন্দবাজারের  বিশেষত্ব হল, এখানে যা-ই বিক্রি করা হবে, তা হতে হবে নিজে হাতে তৈরি।  সে হাতের তৈরী   কাগজের ফুল হোক, বা যা কিছু!  অধ্যাপিকা সবুজ কলি সেন জানান,  বিশ্বভারতীতে দুর্গা পুজো বলা হয় না। এখানে বলা হয় শারদ উৎসব।  মহালয়ার দিন আনন্দ মেলা করে শারদা অবকাশ বলে ছুটি দেওয়া হয়।



পি/ব 

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad