দেবশ্রী মজুমদার: ঐতিহ্য মণ্ডিত হলকর্ষণ উৎসবে বিশ্বভারতীতে আর এস এসের ভাব ধারায় দীক্ষিত অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সর্বভারতীয় নেতার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বভারতী ফ্যাকাল্টি এ্যাসোশিয়েশন নামে এক অধ্যাপক সংগঠন। কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে উপাচার্যকে চিঠি দিল বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি এ্যসোসিয়েশন সংক্ষেপে ভিবি উফা।
তাঁদের প্রতিবাদের অন্যতম কারণ বিশ্বভারতীর মত কবির ভাবনায় পুষ্ট ধর্মীয় নিরপেক্ষ জায়গায় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি। তিনি কোন সরকারি পদাধিকারী ছিলেন না। বিশ্বভারতী তরফে তাঁকে একজন সমাজ সেবী বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছিল। তাঁর নাম সুনীল আম্বেদকর। এবি ভিপির জাতীয় সচীব। আর এস এসের মত সংগঠনের ভাবধারায় যুক্ত ব্যক্তি।
এব্যাপারে বিশ্বভারতীর এক প্প্রবীন আশ্রমিক কালীপদ সিংহ রায় বলেন, বর্তমান উপাচার্য মোদির লোক। তাঁকে নিয়ে আগেই বই লিখেছেন বলে জানি। তাই বিশ্বভারতীর মত অনুষ্ঠানে ওই ভাবধারার লোকজনই তো আসবেন। বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি সম্পর্কে জানলে যা কোন দিন হয় নি, তা করতেন না তিনি।
তাঁদের দাবি সনদের ১১ নং পয়েন্টে বলা হয়েছে ‘বিশ্বভারতীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, ১৯৯০.০৮.১৯-তে নির্ধারিত "হলকর্ষণ" অনুষ্ঠানের অন্যতম সরকারী অতিথি ছিলেন কোনও ছাত্র বা সংগঠনের একজন নেতা, যিনি কোন একাডেমিক বা প্রশাসনিক শংসাপত্র ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সারিবদ্ধ ছিলেন। তাঁর পরিচয় হয়েছিল শিক্ষাবিদ’ হিসাবে। "হলকর্ষণ" এর পরে অনেক অনুষদ সদস্যকে (যাদের মধ্যে কিছু সরকারী পদে আছেন) বিশ্বভারতীর নীতিগত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য উপাচার্যের বাসভবনে আমন্ত্রিত হয়েছিল। আমরা কর্তৃপক্ষের এ জাতীয় পদক্ষেপের নিন্দা জানাই এবং ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পবিত্রতা বজায় রাখার আবেদন করছি’।
ঐতিহ্য মণ্ডিত এই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে কবির প্রয়াণ দিবসের পরের দিন। এই অনুষ্ঠানে এযাবৎ কোন উপাচার্যকে এরকমভাবে প্রথা ভাঙতে দেখা যায় নি। ২০১৪ সালে যখন সুশান্ত দত্ত গুপ্ত উপাচার্য ছিলেন তখনও দেখা গেছে এই হল কর্ষন উৎসব পালিত হয়েছে পুরানো ঐতিহ্য মেনেই। তখন হলকর্ষন উৎসবে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের যুগ্ম সম্পাদক স্বামী প্রাণানন্দ। এছাড়াও, উপাচার্য স্বপন কুমার দত্তের কার্য্যকালে ২০১৬ সালে উত্তর বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি বিজ্ঞানের উপাচার্য চিরন্তন চট্টোপাধ্যায় এবং ২০১৭ সালে এসেছিলেন সুনীতি পাঠক।
তবে সংগঠনের সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্য ও সচিব সমর সাহা সংগঠনের পক্ষে বুধবার এবং বৃহস্পতিবার থেকে শনি ও রবিবার পর্যন্ত সাপ্তাহিক ছুটিতে পরিবর্তনে নীতিগতভাবে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এটি বিশ্বভারতিকে পেশাদার এবং একাডেমিক উপায়ে বাইরের বিশ্বের সাথে নিজেকে যুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। অনুষদের সদস্যরা বৃহস্পতিবার বুধবারের নামাজে অংশ নিতে পারেন এবং তারা সাপ্তাহিক ছুটিতে পরিবারের সাথে থাকতে পারেন।
আমরা এর দ্রুত বাস্তবায়ন (পরবর্তী সেমিস্টারের হতে পারে) দাবি করছি। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন থাকছে, বিশ্বভারতীতে পরিবার নিয়েই থাকার কথা। আর ঐতিহ্যগত ভাবে দিনপরিবর্তন বিশ্বের সাথে একমাত্র যোগাযোগের উপায়ন যেখানে বিশ্বভারতীর র্যাংক কমছে ন্যাকের খাতায়, এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রবীন আশ্রমিকরা। এব্যাপারে সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে ফোন করলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সংগঠনের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এই চিঠি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে মেলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন।
উপাচার্যের কোন বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয় নি। বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সেনকে ফোন করা হয়, তিনি ফোন ধরেন নি। বা কল ব্যাক করেন নি।
পি/ব
No comments:
Post a Comment