দেবশ্রী মজুমদার: কি অদ্ভুত না! চুরি হলে মানুষ পুলিশের কাছে যায়। কিন্তু এই গ্রামে উলট পুরাণ। কোন চুরি হলে, কেউ ড্রাগ খেয়ে বাড়িতে অশান্তি করলে আগে মনে পড়ে সেই আজমিরা বিবিকেই। তারপর পুলিশ। আজমিরা বিবির বাড়ি বোলপুর থানার রূপপুর পঞ্চায়েতের মোলডাঙা।
শুক্রবার গ্রামের মসজিদ পাড়ার বাসিন্দা বছর আঠারোর ফুচু সেখ তাঁর মেসো খোকন সেখের বাড়ি থেকে সোনার গহনা চুরি করে। চুরি করা গহনা স্থানীয় এক স্বর্ণকারের কাছে জিম্মায় রাখে। আজমিরা বিবি দোকান খোলার আগে সেই গহনা উদ্ধার করে চোর সমেত থানায় হাজির।
প্রশাসন আজমিরা বিবির কাজে খুব খুশি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কেউ এমন ভাবে এগিয়ে এলে প্রশাসনের কাজ অনেকটাই সহজ হয়। বোলপুর শান্তি নিকেতন থানার রূপপুর পঞ্চায়েতের মোলডাঙা গ্রাম। দুঃস্থ মানুষের বাস এই গ্রামে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় মাদকাসক্ত মানুষের বাড় বাড়ন্ত একসময় তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল। এলাকার মেহনতি মহিলাদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন মেহনত! আজও তা সক্রিয়।
ড্রাগ মুক্ত গ্রামের শপথ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন মোলডাঙার আজমিরা বিবি। জীবনে থামতে শেখেন নি তিনি। তাই তো গ্রামের ড্রাগের কারবারি দের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পিছপা হন না তিনি। এখন ড্রাগের প্রকোপ অনেক কমেছে তাঁর প্রচেষ্টায়। তাই শুধু চোর নয়, চুরির মূল কারণ যে সেই ড্রাগ, এটা বুঝতে তার অসুবিধা হয় নি। ফুচু সেখ আগে মোবাইল চুরি করে বনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল। তাঁর প্রমিলা বাহিনীর নজরে আসতেই সে ধরা পড়ে যায়।
মাদকাসক্ত হওয়ায় তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে। একসময় এই ছবি ছিল ঘরে ঘরে। যা আয় করে বাড়ির ছেলেরা তা উড়িয়ে দিত মাদক দ্রব্যে। গাঁজা, চরস, হেরোইনের মত মাদক দ্রব্যের রমরমা কারবার ছিল এলাকায়। বাড়ির বৌদের গহনা বিক্রি করতে পিছপা হতো না তারা। এখন সেই দুঃস্বপ্নের দেশ এখন শেষ। ড্রাগের মুক্তাঞ্চল এখন ড্রাগ মুক্তির পাশে। এই ভালো কাজে পাশে পেয়েছেন প্রশাসন থেকে গ্রামের মানুষ।
আজমিরা বিবি বলেন, খারাপ মানুষের থেকে ভালো মানুষের সংখ্যা বেশি। ভালো মানুষ জোট বাঁধলে খারাপ মানুষ টিকতে পারবে না। তাদের পাল্টাতেই হবে। সামনে ৭ তারিখ থেকে ১১ তারিখ মহররম। এলাকার দুজন মাদক পাচারকারী জেলে আছে। ফুচু জেলে থাকলে চুরি কমবে। ওরা ছাড়া থাকলে মহররমের ভিড়ের মধ্যে লোকের মোবাইল চুরি করতো।
পি/ব
No comments:
Post a Comment