দেবশ্রী মজুমদার: ইটালীর মন্টেবেলো দূর্গের কি সেই রহস্য যে আজও মানুষ তা বিশ্বাস করে? ১৬০০ সালে একজন খ্রিস্টান পুরোহিত এই কাহিনী লিখে গেছিলেন। ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে সেই কাহিনী সকলের মুখে মুখে ফেরে ফেরে! কী সেই কাহিনী?
কেউ বলে খুন! কেউ বলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু। সালটা ছিল ১৩৭৫ খ্রীষ্টাব্দের ২১জুন।
ইটালির মন্টেবেলো দূর্গ। লর্ড উগোলিনুসিও ডা মন্টে বেলোর দূর্গ। তাঁর একটি ফুটফুটে পাঁচ বছরের মেয়ে ছিল। নাম গুয়েনডালিনা! সে দূর্গের মধ্যে খেলতো।
ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস। একে তো গায়ের রঙ পরিষ্কার ছিল। তার উপর ধবল হলো।
লোকালয়ে একটি কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। কারো গায়ে ধবল হলে, তার উপর শয়তানের ভর আছে। এই ভয়ে তাকে কখনো একা ছাড়া হতো না। মায়ের একটি চিন্তা। কেউ যদি কুসংস্কার বশতঃ তার ক্ষতি করে? তাই সর্বদা তার সঙ্গে দুজন রক্ষী থাকতো।
মা তাকে মনের মতো সাজিয়ে দিতেন। চুল রাঙিয়ে দিতেন উদ্ভিজ্জ রঙে। অনেকটাই নীলচে লাগতো! যেমন ছিল তার নীলচে চোখ! যার জন্য অনেকেই তাকে আজুরিনা বলে ডাকতো।
তারপর এল ১৩৭৫ সালের সেই অভিশপ্ত দিন। ২১ জুন। তখন চলছে সূর্যের উত্তরায়ণ গতি। বাইরের আবহাওয়া ভালো ছিল না। তাই দূর্গের বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই ছিল না। সঙ্গে প্রতিদিনের মতো দুজন রক্ষী ছিল। গুয়েনডালিনার হাতে ছিল কাপড়ের বল। হঠাৎ বলটা হাত থেকে গড়িয়ে নিচের দিকে চলতে থাকে। বাচ্চা মেয়ে ধরবার জন্য গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায়। রক্ষীরা হয়তো খেয়াল করে নি। বা করতে চায় নি। এমন হয়তো নির্দেশ ছিল। সে রহস্য থেকে গেছে সেই অন্ধকূপে যেখানে গুয়েনডালিনা কাপড়ের বল তুলতে গিয়ে চিরদিনের মতো হারিয়ে গেছিল। রক্ষীরা নাকি তাকে খুঁজে পায় নি।
অন্ধকূপের মেঝের দরজা গলিয়ে কি করে ওই দুধের শিশু গলিয়ে গেল সেই রহস্যের উন্মোচন কোন দিন হয় নি। লর্ডের স্ত্রী শোকে পাথর হয়ে গেছিলেন।
লর্ড নাকি রক্ষীদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, গুয়েনডালিনা কোথায় গেল?
গুয়েনডালিনা চিরদিনের জন্য অন্ধকূপে হারিয়ে গেল। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অর্থাৎ যে বছরের শেষে শুন্য বা পাঁচ থাকে। সেই বছর সূর্যের উত্তরায়ণ গতির সময় শোনা যায় গুয়েনডালিনার কান্নার আওয়াজ। যা উঠে আসে দূর্গের অন্ধ কূপের ভিতর থেকে। অনেকেই চেষ্টা করেছে সেই কান্নার আওয়াজ রেকর্ড করতে। যা আজও পর্যন্ত কেউ রেকর্ড করতে পারে নি।
নিয়ম মাফিক ২০২০ সালে শোনা যাবে গুয়েনডালিনার আর্তনাদ। অনেকেই শুনতে যাবেন মন্টেবেলো দূর্গে। কানে শুনে, আবার রেকর্ড করতে চেষ্টা করবেন। হয়তো পারবেন না। কিন্তু অনেকেই যাবেন।
১৯৮৯ সালে লর্ডের উত্তরাধিকারী দূর্গের সংস্কার করেন। টিকিট কেটে অনেকেই সেই অতীন্দ্রিয় ভৌতিক স্বাদ গ্রহণ করতে যান। অনেকেই বিশ্বাস করেন এই লোকায়ত কাহিনী।
ভূগোল, ইতিহাস, সংস্কৃতিতে ভিন্ন হলেও, 'সাত সমুদ্র তেরো নদী পার' নিমেষে এই দূরত্ব কমিয়ে দেয়। সেই একই মৃত্যু চেতনা যেন আমাদের কোথাও না কোথাও ছুঁয়েই যায়--- ''
কড়ির মতন শাদা মুখ তার দুইখানা হাত তার হিম, চোখে তার রক্তিম হিজল কাঠের চিতা জ্বলে"
---- (জীবনানন্দ দাশের শঙ্খমালা থেকে নেওয়া)
পি/ব
No comments:
Post a Comment