দেবশ্রী মজুমদারঃ ব্রেক আপ ! ব্রেক আপ! শুনতে শুনতে ফেড আপ! এতো আর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনো মালিন্য নয়! যে ‘ম্যয় তো মাইকা ঘর চলা যাউঙ্গি’ বলা মাত্রই স্বামী সোজা হয়ে যাবেন। এখন ব্রেক আপ মানেই ফাইনাল ব্রেক আপ!
কে আর খুলে বসে মধ্য যুগীয় বৈষ্ণব পদাবলী বলুন! আহা!--
খুলিয়া চাঁপার মালা এলায়ে কবরী
বধূঁর যুগল পদ বাঁধেন কিশোরী।
এই ‘মান’, ‘আভিসার’ , ‘মিলন’ এসব তখন মূল্যহীন। ব্যস্ত জীবনে প্রেমের ফুল কুসমিত হওয়ার আগেই ‘ব্রেক আপ’। এরই নাম হয়ত আধুনিক প্রেম। তাই অনেককেই বলতে শোনা যায়, স্বামীকে পাওয়ার আগেই নাকি অনেকের সাথেই ‘ব্রেক আপ’ হয়েছে। কিন্তু কেন এত বেশী করে ব্রেক আপ? এই প্রশ্ন কী আমরা কখনও নিজেদের করেছি? বিজ্ঞরা বলেন, মননের দরকার আছে। পুনরায় পর্যালোচনা করা দরকার সেই ছোট ছোট অভ্যাস গুলোকে সম্পর্কের রাস্তায় হাঁটবার সময় যা হয়ত নিতান্ত অবহেলায় রাস্তার দুধারে ফেলে এসেছি অনেকদিন আগেই!
অনেকেই বেশ স্বস্তির সাথেই বলেন, যাহোক আমি সেই দুঃসময় শেষমেশ কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। কিন্তু কতটা সময় লাগতে পারে এই অপূর্ণ ভালোবাসার ক্ষত সেরে উঠতে? তখন কী করবেন আপনি? দেবদাসের মত উড়ু উড়ু ভাব নিয়ে ঘুরবেন? না পারোর মত দুঃখের অনলে আগুন পোহাবেন? কবি বলেছেন যে, আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে, আসেনাই কেহ অবনী পরে। ঠিক তাই, আমাদের বাঁচাটাই পরস্পরের জন্য। এব্যাপারে মনস্তত্ববিদরা অর্থাৎ যাঁদের কাজ মানুষের মন নিয়ে, তাঁরা আপনাদের সাহায্য করতে পারবেন। অবশ্য যদি আপনি চান।
মনের ভার লাঘব করতে গেলে, দুঃখ চেপে রাখলে হবে না। মোদ্দা কথা, দুঃখ করুন। হাল্কা হবেন। যদি নিজেকে নিয়ে ঘরের কোনে গুটিসুটি মেরে দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে পড়ে থাকবেন ভাবেন, সেটা কোন সমাধান নয়। জ্যাকসন নামে একজন পাশ্চাত্যের থেরাপিস্ট মনে করেন, নতুন সম্পর্কে প্রবেশের আগে, পুরানো সব মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। আর এটা খুব কঠিন কাজ। কারণ বার বার এরকম ঘটলে, কারো মনে হওয়া স্বাভাবিক, কেন আমার ক্ষেত্রেই বার বার এমন হয়?
কোন প্রিয় সম্পর্কেই ইতি মানেই একটা মৃত্যু। আশা, স্বপ্ন, কত মুহূর্ত, সব কিছুর মৃত্যু। সেই মৃত্যু শোক বহন সহজ নয়। মনস্তত্ব বিদ ট্রিসিয়া ওয়ালনিন অনেকটা তাই মনে করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে দুঃখ পেয়ে বিলাপ করলে, দুঃখ বিলোপ হবে। মনের ক্ষত সারবে। এটাও আধুনিক শাস্ত্রে এক নিরাময়ী চিকিৎসা। কেউ কেউ বলেন, টাইম ইজ দ্য বেস্ট হিলার। সময় সব করতে পারে না। যদি, আমরা নিজেরা চেষ্টা না করি। এলিনা জ্যাকসন একজন চিকিৎসক মনে করেন, নিরাময় নির্ভর করে রোগী কেমনভাবে ব্যর্থতা, প্রত্যাখ্যান এবং ত্যাগের মত বিষয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া দেয়। আর এটাই ‘ মোরনিং প্রসেসে’ অর্থাৎ দুঃখ অনুভূতির মধ্য দিয়ে নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
চিকিৎসক ডানি মোয়ের মতে মনের এই ক্ষত সারানো যেতে পারে কতগুলি উপায়েঃ –
১) নতুন প্রেমে পড়ার মধ্য দিয়ে এই ক্ষত অনেকটাই সারানো যেতে পারে।
২) মজা পাওয়ার মত কোন কাজে নিযুক্ত হওয়া। তার পর সেটা শেষ হতেই দুঃখের প্রকাশটা সহজেই হতে দেওয়া।
এমিলি জ্যাকসন আবার মনে করেন, কোন কিছু সৃজনশীলতা, চিন্তন ও তার মধ্য দিয়ে শোক ভুলে পুনর্যৌবন লাভ করা যায়।
চিন্তন নিয়ে আসে আত্মবিশ্লেষণ। তখন বোঝা যায় নিজের ছোট ছোট ভুল ত্রুটি গুলো। পারস্পরিক ভালবাসার অর্থ পারস্পরিক সমঝোতা। হয়ত সময়ের ফেরে সেগুলো কেউ ভুলে থাকতে পারে। আর তাতেই সম্পর্কের টানাপোড়েন। ক্রোধ, দুঃখ, অভিমান এসবের বিয়োজন দরকার। সাফ কথা, কান্না পেলে কাঁদুন। এই উপদেশ খ্যাতনামা চিকিৎসক ওয়ালনিনের। ব্রেক আপের সময় খুব স্ট্র্যাটেজিক ভাবে চলা উচিৎ। দুঃখকে বেরোতে দিন। সেই সময় যেটা ভালো লাগে করুন। তবে সেটা বাঁচবার জন্য। কিন্তু অনেক সময় অনেকেই ভাবে না, একটা খারাপ সম্পর্ক শেষ হওয়া ভালো। কারণ একটা ভালো সম্পর্ক পাওয়ার অধিকার বা যোগ্যতা তার বা তাদের আছে।
এবার আসা যাক, চিন্তার প্রসঙ্গে, যদি প্রাক্তনী বা প্রাক্তনের কথা চিন্তা করতেই হয়, তখন ভাবতে হবে সেই সময় তার নিজের আচরণ কেমন ছিল?
ভাবতে হবে হারানোর দুঃখ থেকে সেই মুহূর্তগুলো বেশী করে যেগুলো উভয়ে মেনে নিতে পেরেছিলেন। আর সেটা দুঃখের মধ্য দিয়েই।
জীবন থেমে থাকে না। তাই শুরু করুনঃ
১) ফের ডেটিং
২) নতুন স্মৃতি, নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৩) বিবাহিতরা নিজেদের যৌন জীবন গড়ে তুলুন নতুন বৈচিত্রের মধ্যে দিয়ে। যাতে এক ঘেয়েমি কাটে। তবে জোরাজুরি নয়। নির্দিষ্ট আবেগ ঘন মুহূর্তের জন্য যে সময় উভয়ের মন সাড়া দেবে। বিবাহিত জীবন মানেই যৌন জীবন নয়। পরস্পরের ছোট ছোট ভালো লাগাগুলো গুরুত্ব দিন। নিজেদের জন্য সময় বের করুন। তাহলে কখনও হাঁফিয়ে উঠবেন না।
৪) সহজ সাবলীল প্রশ্নের মধ্য দিয়ে বোঝাপোড়া গড়ে তুলুন।
৫) আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে পরিস্থিতি সামলান। কোন মিথ্যা ভাষণ নয়।
৬) খুব পজিটিভ চিন্তার শরিক হোন।
৭) ছোট খাটো সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে সম্পর্কের ভিত গড়ুন।
বেস্ট অফ লাক।
পি/ব
No comments:
Post a Comment