ক্যানসার। এই একটি শব্দেই হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় অনেকটা। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এই রোগের সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব, তবে সম্পূর্ণ আরোগ্যের চাবিকাঠি এখনও অধরা। তার উপর ডায়াগোনসিস থেকে কেমোথেরাপি— পাহাড় প্রমাণ খরচ থেকে বাঁচতে মাঝপথে চিকিৎসা ছেড়ে দেন অনেকেই। কেউ আবার পাড়ি দেন ভিন্ রাজ্যে। রোগের পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে আধুনিক রেডিয়োথেরাপি, ক্যানসার চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো এক ছাতার তলায় আনল ‘হেলথ কেয়ার গ্লোবাল এনটারপ্রাইজ (HCG)’।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্যানসার চিকিৎসায় রেডিয়োথেরাপির পাশাপাশি প্রয়োজন হয় নিউক্লিয়ার মেডিসিনের। এ রাজ্যে সরকারি ক্ষেত্রে শুধু এসএসকেএমেই কয়েক’শো কোটি টাকা দিয়ে এ জন্য প্রয়োজনীয় গামা মেশিন কেনা হয়েছিল। বেসরকারি ক্ষেত্রে এই মেশিন রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায়। এইচসিজি পরিচালিত ৮৮টি বেডের এই নতুন ক্যানসার হাসপাতালে আধুনিক রেডিয়োথেরাপির পাশাপাশি রয়েছে পেট সিটি স্ক্যান, সার্জিকাল অনকোলজি, রেডিয়েশন অনকোলজি, মেডিক্যাল অনকোলজি, হেমাটো অনকোলজি, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি। ক্যানসার রিসার্চ ও থেরাপিতে গোটা দেশেই নাম রয়েছে এইচসিজি-র।
ক্যানসার চিকিৎসায় একাধিক নতুন গবেষণালব্ধ পদ্ধতির পথ দেখিয়েছে তারা। যেমন, স্টিরিওট্যাকটিক রেডিয়োসার্জারি, রোবোটিক রেডিয়োসার্জারি এবং জিনের মাধ্যমে গোড়া থেকে রোগের বিনাশ। কলকাতার নতুন সেন্টারে এই সব কিছুরই প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন এইচসিজি এন্টাপ্রাইজের চেয়ারম্যান ও সিইও ডঃ বিএস অজয় কুমার। তাঁর কথায়, “রোগের নির্ণয় ও থেরাপির ব্যবস্থা একসঙ্গেই রাখা হয়েছে এই সেন্টারে। তাই ইকো ডায়াগোনস্টিকের সঙ্গে হাত মেলানো। একই ছাতার তলায় রোগীরা সব ব্যবস্থা পাবেন। পাশাপাশি সংবেদনশীল, অভিজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সদের পরামর্শও মিলবে।
শুধু কলকাতা নয় বাংলার অন্যান্য রাজ্য থেকেও এখানে চিকিৎসা করাতে আসতে পারেন রোগীরা। সব ব্যবস্থাই রাখছি আমরা।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ২০০৮ সালে পৃথিবীতে ক্যানসারে মৃত্যু হয়েছিল ৭৬ লক্ষ মানুষের। যা মোট মৃত্যুর ১৩ শতাংশ। ২০৩০ সালে ক্যানসারের কারণে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়াবে কোটিতে। বহু সময়েই ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় দীর্ঘদিন খরচ বহন করা অসম্ভব হয় পরিজনেদের পক্ষে। অনেকেই যন্ত্রণা উপশমে বিকল্প চিকিৎসার দ্বারস্থ হন, বা মাঝপথে চিকিৎসা ছেড়ে দেন। তাতে রোগের প্রকোপ বাড়ে। এইচসিজি হেলথ কেয়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর ডঃ দীনেশ মাধবন বলেছেন, “রোগের উপশমের চেষ্টা শুধু নয়, পরবর্তী পর্যায়ে রোগীদের সুরক্ষিত জীবনযাপনের উপায় বাতলে দেবে এই ক্যানসার সেন্টার।
রোগীদের হাত ধরবেন ডাক্তাররা।” কলকাতায় বহুদিন ধরেই ক্যানসার ডায়াগোনসিস (এক্স রে, ইমেজিং ইত্যাদি) সেন্টার হিসেবে কাজ করছে ইকো ডায়াগোনস্টিক সেন্টার। এইচসিজি-র সঙ্গে তাদের এই যৌথ উদ্যোগ নিয়ে সেন্টারের সিএমডি ডঃ এসকে শর্মা বলেছেন, “গত কয়েক দশক ধরে আমরা ক্যানসার রোগীদের উন্নত পরিষেবা দিয়ে আসছি। এইচসিজি-র এই উদ্যোগের কারণে এ বার পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার রোগী বাঁচার পথ খুঁজে পাবে।” ভারতের অন্যতম ক্যানসার কেয়ার ইনস্টিটিউট এইচসিজি। দেশে তো বটেই বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানেও ছড়িয়ে রয়েছে এদের শাখা। হেড কোয়ার্টার বেঙ্গালুরুতে। তবে শহর কলকাতার বুকে এই প্রথম। কলকাতার ক্যানসার ডায়াগোনসিস সেন্টার ইকো (EKO)ডায়াগোনস্টিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজারহাটে তাদের নতুন শাখা এইচসিজি ইকো ক্যানসার সেন্টার (HCG EKO Cancer Centre)। ক্যানসার থেকে ফিরে আসা শুধু যুদ্ধ-জেতা নয়, অ্যদেরও ফিরিয়ে আনা যায়।
পি/ব
No comments:
Post a Comment