তালপাতার স্কুল - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, 14 June 2019

তালপাতার স্কুল



নানা-দাদার কাছে তালপাতায় লেখার কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন। শুনেছেন বিশেষ ধরনের গাছের রস দিয়ে কালি তৈরির কথাও। সেটা আসলে রূপকথার মতো মনে হয়। কারণ আধুনিক যুগে যখন পুরো পৃথিবীটাই হাতের মুঠোয়, তখন তালপাতায় লেখার গল্পটা রূপকথা ছাড়া আর কি! গল্প নয়, সত্যিই ছিল তালপাতায় লেখার প্রচলন। শুনে আরেকটু অবাক হবেন- এখনো আছে সেই স্কুল; যেখানে তালপাতায় লেখা হয়।

তালপাতার ওই স্কুল দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জে। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রত্যন্ত গ্রাম ডুমুরিয়ায় এ স্কুল অবস্থিত। স্কুল বলতে এর কোনো অবকাঠামো নেই। একটি দুর্গা মন্দিরে মাদুর বিছিয়ে চলে পাঠদান।

স্থানীয়রা জানান, অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে প্রথমে এ পাঠশালায় পাঠান। এখানে বর্ণমালা লেখার হাতে খড়ি হয় তাদের। বর্ণমালা শেখা হলে শিশুদের পাঠানো হয় পাশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মূলত শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির উপযুক্ত করে তৈরি করা হয় এ পাঠশালায়। বলতে পারেন- এটা একটা প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এ গ্রামের মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে নিরলস কাজ করেন শিক্ষানুরাগী রথীন্দ্র নাথ মালো। স্বাধীনতার পর তিনি এ তালপাতার পাঠশালা গড়ে তোলেন। শুরুর দিকে তিনি বিভিন্ন গাছতলা ও বাড়িতে ঘুরে ঘুরে শিশুদের পাঠদান করতেন। এখন দুর্গা মন্দিরে পাঠদান করা হয়। এটাকে দুর্গা মন্দিরের পাঠশালাও বলা হয়। টুঙ্গিপাড়ার ছোট ডুমুরিয়া ও বড় ডুমুরিয়া গ্রাম এবং কোটালীপাড়ার কাঠি গ্রাম, কানাই নগর, ভৈরব নগরসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিশুরা শিক্ষা নিতে আসে।

এই পাঠশালার একমাত্র শিক্ষক কাকলি কির্ত্তনীয়া বলেন, তিনি তালপাতায় প্রথমে বর্ণ লেখেন। এরপর শিক্ষার্থীরা নিজেদের বানানো কালি দিয়ে ওই বর্ণের ওপর হাত ঘোরায়। এভাবে বর্ণমালা শিখে ফেলে তারা। এতে হাতের লেখা সুন্দর হয়। শুরুতে কাগজ আর কলম দিয়ে লিখলে হাতের লেখা এত সুন্দর হয় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, অভিভাবকরা সন্তানদের প্রথমে এই পাঠশালায় পাঠান। এখানে শিশুদের ইংরেজি ও বাংলা বর্ণমালা এবং নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয়। তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়।

ডুমুরিয়া গ্রামের আনন্দ কীর্তনিয়া, দীলিপ কীর্তনিয়া, গোবিন্দ বিশ্বাস, গৌর মণ্ডল জানান, তারাও এই পাঠশালায় পড়েছেন। তাদের ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনিরাও পড়ছে। এখানে হাতে খড়ি নিয়ে অনেকেই এখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। 
জানা যায়, সরকারি সাহায্য ছাড়াই স্থানীয়দের সহযোগিতায় এ পাঠশালা চলছে। ধানের মৌসুমে গ্রাম থেকে ধান তুলে শিক্ষকের বেতন দেয়া হয়। এক বছরে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য দেয়া হয় এক মণ করে ধান।

অভিভাবকরা জানান, তালপাতায় শিক্ষকের এঁকে দেয়া বর্ণের ওপর হাত ঘুরিয়ে বর্ণমালা লেখা শেখে ছেলেমেয়েরা। এতে হাতের লেখা ভালো হয়। তাছাড়া, এ পাঠশালায় নৈতিক শিক্ষাও দেয়া হয়। এটা শিশুদের চরিত্র গঠনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে কাজ করে। পাঠশালাটি যাতে টিকে থাকে, এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad