একজন আদ্যন্ত বিকৃত নৃশংস হত্যকারিণী। তিনি কিনা হয়ে উঠলেন সাহিত্য দর্শন চলচ্চিত্রের উপজীব্যর দেশের সংস্কৃতির অন্যতম ভরকেন্দ্র । তিনি শাডা অ্যাবে । এই জাপানি তরুণী যৌন সম্ভোগ চলাকালীন শ্বাসরোধ করে খুন করেন প্রেমিককে । তারপর তার পুরুষাঙ্গ এবং অণ্ডকোষ কিমোনোর আড়ালে লুকিয়ে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন সংগ্রহে ।জাপানের রাজধানী টোকিওতে ১৯০৫ সালে জন্ম গ্রহণ করা শাডার নিজের জীবন কৈশোরেই ধাক্কা খায় ।
উচ্চবিত্ত পরিবারে তিনি ছিলেন বাবা মায়ের আদরের ছোট মেয়ে । শৈশব থেকে চলতেন নিজের খেয়াল খুশিতে । অবাধ্যতায় বাধা পাননি বাবা মায়ের কাছ থেকে । একদিন পনেরো বছর বয়সী শাডা ধর্ষিতা হল । সেখান থেকে পাল্টে গেল তাঁর জীবনের স্রোত ।সমাজের নিয়ম অনুযায়ী ধর্ষিতা শাডাকে বাবা মা দিয়ে দিলেন গেইশা প্রথায় । অর্থাত অভিজাত দেহ পসারিণী ।
শাডা ক্রমে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন এই জীবনে । নৃত্যকলায় পারদর্শী হয়ে অভিজাত যৌনকর্মী ।শেষে যৌনবৃত্তি হয়ে গেল শাডার মুক্তির জায়গা । তিনি যেন উপভোগ করতেন বহু পুরুষসঙ্গ । কিন্তু এই জীবন বেশিদিন ভাল লাগত না । কখনও কাজ নিতেন রেস্তোরাঁয়, মেড হিসেবে । কিন্তু অর্থ গ্ল্যামারের খোঁজে আবার পা বাড়াতেন সেই আদিম পেশায় । এইভাবেই চলছিল তাঁর জীবন ।
কিন্তু আশচর্যের বিষয়, শাডা কিন্তু তাঁরা বাবা মাকে ভোলেননি । বৃদ্ধ বয়সে যথেষ্ট সেবা যত্ন করেছিলেন তাঁদের । নিজের জীবনকে যেভাবে অন্ধকারে সাজান না কেন ।এভাবেই পেরিয়ে গেল ৩১ টি বসন্ত । বহু পুরুষের উপভোগ্যা শাডার জীবনে এলেন কিচিজো ইশিদা । কিন্তু এ বার কেমন যেন ঘোর লাগল শাডার চোখে । যে সুন্দরী আঙুলে খেলিয়েছেন একাধিক পুরুষকে, তিনি কি না পাগল হয়ে গেলেন কিচিজোর জন্য ।
তাঁর রেস্তোরাঁতেই কাজ করতেন শাডা ।ক্রমে জমে উঠল শাডা-কিচিজো প্রেম । চল্লিশোর্ধ্ব
বিবাহিত পুরুষ কিচিজোর সঙ্গে ভেসে গেলেন ৩১ বছর বয়সী শাডা । কিন্তু কদিন পরেই ঘোর কেটে আসল সত্যি বুঝতে পারলেন শাডা । কোনও প্রেম নয় । ইচিজোর কাছে তিনি শুধু শরীর । যেমন আরও অন্য নারীর সঙ্গে বিছানায় যান ইচিজো, তেমনি শাডার সঙ্গেও ।
সেটা ১৯৩৬-এর বসন্ত । শাডাকে নিয়ে ইচিজো গেলেন নির্জন গন্তব্যের এক হোটেলে । দুজনের মাঝে শুধু শরীর-শরীর খেলা । খেলতে খেলতেই ইচিজোর গলায় শাডা পেঁচিয়ে ধরলেন পোশাক । শ্বাসরোধ হয়ে এল । কিন্তু এটা কোনও যন্ত্রণা নয় । ইচিজোর কাছে ধরা দিল সেক্সুয়াল প্লেজার হিসেবে ।এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলেন শাডা । ইচিজো যত চান, তিনি তত পেঁচিয়ে ধরেন গলা । একসময় নিথর হয়ে গেলেন ইচিজো । সব আনন্দ উপভোগের ঊর্ধ্বে চলে গেলেন ।
সদ্য খুন করা প্রেমিকের পাশে শুয়ে পড়লেন শাডা । এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছিল তাঁর মন । মন থেকে নেমে গেল বড় বোঝা । এ বার ইচিজোর পুরুষাঙ্গ আর অণ্ডকোষ ছুরি দিয়ে কেটে শাডা লুকিয়ে নিলেন কিমোনোর আড়ালে । হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ঘরের নানা জায়গায় ইচিজোর রক্ত দিয়ে লিখলেন তাঁদের দুজনের নাম । তারপর হোটেল কর্মীদের বলে গেলেন, ইচিজোকে যেন বিরক্ত করা না হয় । কেউ টেরই পেল না কিমোনোর আড়ালে প্রেমিকের পুরুষাঙ্গ অণ্ডকোষ লুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এই রমণী ।
কদিন পরে ইচিজোর দেহ যখন আবিষ্কৃত হল তখন চারদিকে সেনসেশনের থেকেও বড় হয়ে দেখা দিল শাডা প্যানিক । তন্নতন্ন করে তল্লাশির পরে অবশেষে ধরা পড়লেন শাডা । ১৯৩৬-এর মে মাসে ।অস্বীকার তো একেবারেই নয় । বরং পুলিশকে ছবির মতো বর্ণনা দিলেন শাডা, কীভাবে খুন করেছেন তিনি । প্রমাণ হিসেবে দেখিয়ে দিলেন কাটা পুরুষাঙ্গ এবং অণ্ডকোষ । ছমাস ধরে নিজের কাছে সেগুলো রেখে দিয়েছিলেন তিনি !
অফিসার প্রশ্ন করলেন, কেন ওগুলো সঙ্গে এনেছিলেন শাডা ? উত্তর এসেছিল, শাডা নাকি প্রেমিকের কোনও একটা চিহ্ন নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিলেন । মাথা বা অন্য কিছু অনেক বড় হয়ে যেত । তাই …জবাব শুনে অফিসার তো হতভম্ব ।আদালতের বিচারে ৬ বছরের কারাদণ্ড হয় শাডার । সেই শাস্তির মেয়াদ তিনি কাটিয়েছিলেন ।
ততদিনে জাপানে কী হয়নি তাঁকে নিয়ে ! তথ্যচিত্র, চলচ্চিত্র, নাচ গান, নাটক, সব জায়গায় উপজীব্য হয়ে দেখা দিলেন হত্যাকারিণী শাডা ।জেলমুক্তির পরেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে । কিন্তু রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে যান ১৯৭১ সালে । তারপরে আর কোনওদিনও দেখা যায়নি । বিকৃত হত্যাকারী শাডা এখন বেঁচে আছেন জাপানি সংস্কৃতির নানা শাখার উপজীব্য হয়ে ।
No comments:
Post a Comment