কলকাতার দেওয়ালে মেয়ে হারানোর গ্রাফিতি আমরা অনেকেই দেখে ফেলেছি অনেক দিন। গলিতে গলিতে দেওয়ালের গায়ে আঁকা ‘মিসিং গার্ল’-এর ছবি। পাশে, যোগাযোগের নম্বর। হারানো মেয়ে ফিরে পেতে সেই নম্বরের সংস্থার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি। ‘কিডন্যাপ’ ছবির অলঙ্করণেও সেই মেয়ের ছবি। আর, বলা বাহুল্য, এ ছবি হারানো মেয়েদের গল্প নিয়েই, যা সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম জরুরি সমস্যা বলেই জানাচ্ছেন তাত্ত্বিকেরা।
মহীনের ঘোড়াগুলি গান বেধেছিল ‘সেই ফুলের দল’, অর্থাৎ, হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের নিয়ে। রাজা চন্দ পরিচালিত এ ছবিও বলে তাদের কথাই।
মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি ‘কিডন্যাপ’। কোথাও সমস্যাকে অকারণ জটিল করার ছাপ তাই নেই এ ছবিতে। বরং প্রেম-প্রতারণা-হিংসা প্রমুখ বাণিজ্যিক ছবির মোড়কেই গল্প বলা এখানে। ছবির শুরুতে চিন্তিত বাবা চন্দন সেনকে বেশ লাগে। তাঁর কন্যা হঠাৎ নিখোঁজ। এখান থেকে শুরু হয় আখ্যান। একে একে খুলতে থাকে সমাজের সমস্ত প্রতিষ্ঠানের মুখোশ।
পুলিশ প্রশাসন থেকে মিডিয়া, সকলেই অসহযোগিতা শুরু করে। চিন্তিত মেয়ের বাবা যখন ভাবতে বসেন তা হলে উপায়, তখনই এগিয়ে আসেন দেব। সামাজিক এ সমস্যা থেকে মুক্তির রাস্তার খোঁজেই যেন বা এগিয়ে আসেন তিনি। দুবাইয়ের পটভূমিকায় পাকেচক্রে তাঁর সঙ্গে প্রেম হয় অভিনেত্রী রুক্মিণী মৈত্রের। আখ্যান ঘুরতে থাকে দুবাই, ব্যাঙ্কক, কলকাতা। একে একে মুখোশ খুলে যায় সমাজের সমস্ত প্রতিষ্ঠানেরও।
পুজোর আগে এ ছবি আপনাকে এক লহমায় বিদেশ সফর করিয়ে দেবে। এমনকি, এনআরআই বাঙালির জীবনকেও দেখিয়ে দেবে একইসঙ্গে। মূলধারার আর পাঁচটা ছবির সঙ্গে কোথাও বিশেষ ফারাক নেই এ ছবির। তবে কেন দেখবেন আলাদা করে এ ছবি?
দেখবেন, কারণ কোথাও বিশেষ প্রত্যাশা না রেখে নিখাদ মেয়ে হারানোর সমস্যা ও তা সমাধানের কথাই বলে এ ছবি। বলে সারল্যের সঙ্গে। ফাটকা অউজির জন্য স্বদেশ থেকে মেয়ে পাচার হয়ে যায় দুবাই ব্যাঙ্কক। আর দেব যেন বা ওই মেয়ে হারানোর গ্রাফিতি থেকেই বেরিয়ে আসা এক জন নায়ক। তাঁকে বাণিজ্যিক ছবির নায়কের ফর্মুলাতেই দেখানো হয়। কিন্তু এত বেশি মারামারি কেন? প্রশ্ন জাগে তা নিয়েও। এ যুগে মানুষ তো পাচারের মতো কাজ অনেক বেশি ডিজিটালে করবে নিশ্চুপে। কেন তাকে অকারণ মারামারি করে রাস্তা পেতে হবে। তাই এখানে বিশ্বাসযোগ্য লাগে না এ ছবি। বাকি ছবি তরতরিয়ে এগিয়ে চলে।
ভাল লাগে দেবের অভিনয়। নেহাত বাণিজ্যিক ছবির নায়ক থেকে তিনি হয়ে উঠছেন সিরিয়াস অভিনেতা। এ ছবি তারই প্রমাণ। সারা দুনিয়ার হারানো মেয়েদের যন্ত্রণা তাঁর চোখে। শরীরে। গলায়। নিজের প্রেমিকা তথা নারী জাতির জন্য তিনি বলিপ্রদত্ত। অসহায় বাবার চরিত্রে চন্দন সেন ভাল। ভাল লাগে, মিডিয়া প্রধান হিসেবে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে। যোগ্য সঙ্গত করেছেন রুক্মিণীও।
আবহ ও সঙ্গীত নিয়ে আর একটু ভাবা যেত বলে মনে হল। এই ধারার ছবিতে এত শব্দ কেন? মনোসংযোগ তো বেশি বাড়ে যদি শব্দকে পরিমিত ভাবে ব্যবহার করা যায়। আজকের আন্তর্জাতিক ছবি তো তাই বলছে। তবু এখানে এত চিৎকার কেন? সমাজের ক্যাওস দেখাতে কি ছবিকেও ক্যাওটিক হতে হবে? নারী পাচারের সমস্যাও ঠিক যেখান থেকে আসছে। তাই আর একটু যত্ন হয়তো দরকার ছিল আবহে।
No comments:
Post a Comment