YELLOW TALK আয়না নিয়ে যত অদ্ভুত বিশ্বাস - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday, 1 May 2019

YELLOW TALK আয়না নিয়ে যত অদ্ভুত বিশ্বাস



আয়না নিয়ে রূপকথার কি আর শেষ আছে! আরশিতে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দেখার কাহিনী তো সবারই জানা হারানো বা গোপন স্থানে থাকা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর অবস্থানও নাকি নিখুঁতভাবে বলে দিতে পারে জাদুর দর্পণ
কোথাও এ বস্তু সৌভাগ্যের প্রতীক, কোথাও তা আবার বয়ে আনে দুর্ভাগ্য আয়না নিয়ে পৃথিবীর দেশে-দেশে গল্প-গাঁথা ও রহস্যের যেন আদি-অন্ত নেই
সেরকম কিছু কাহিনী আজ এখানে তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য
ভবিষ্যতের আভাস
প্রাচীন গ্রীসে ডাইনিরা আয়না ব্যবহার করতো খ্রিষ্টের জন্মরে প্রায় তিনশ বছর আগের সেসব প্রাচীন গাঁথায় বলা আছে, ডাইনিরা নিজেদের দৈবাদেশ ও বাণীগুলো লিখে রাখতো আয়নার মাধ্যমে
প্রাচীন রোমেও আয়নার প্রচলন ছিল সেখানে ধর্মগুরুরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বর্ণনা করার জন্যে দর্পণ ব্যাবহার করতেন

অন্য ভুবনের সংযোগ সাঁকো
বর্তমানে আয়না তৈরিতে এলুমিনিয়ামের গুঁড়ো ব্যবহার করা হয় কিন্তু প্রাচীন মিসরীয়রা ব্যবহার কতো তাম্র চূর্ণ
তামার সাথে দেবী 'হাথোর' এর সম্পর্ক ছিল বলে ধারণা করতো মিসরীয়রা হাথোর ছিলেন সৌন্দর্য, প্রেম, কাম, সমৃদ্ধি ও জাদুর দেবী
প্রাচীন অ্যাজটেকরা আয়না বানানোতে ব্যাবহার করতো অবসেডিয়ান যা মূলত কাচের মতন দেখতে একজাতীয় কালো আগ্নেয়শিলা অ্যাজটেকরা বিশ্বাস করতো তারা দেবতা'তেজকেটলিপোকা'র সাথে সম্পৃক্ত
রাত্রি, সময় ও বংশ পরিক্রমায় পাওয়া স্মৃতির দেবতা ছিলেন এই তেজকাটলিপোকা স্বর্গলোক থেকে এই মাটির পৃথিবীতে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিধর এই দেবতা আয়নাকে তার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতেন

সুদূরের মিত্ররা
প্রাচীন চীনে চাঁদের স্বর্গীয় শক্তি ধরে রাখার জন্য আয়না ব্যবহারের চল ছিল কথিত আছে, চীনের এক সম্রাট জাদুকরী এক আয়না বসিয়েই নিজের সাফল্য পেয়েছিলেন
আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে, ২৫ খ্রিষ্টাব্দে চীনের সম্রাট কিন শি হুয়াং দাবী করেছিলেন আয়নার দিকে তাকানো মানুষের মুখে তাকিয়ে তিনি তাদের আসল চিন্তা-ভাবনা ও মনের খবর পড়তে পারতেন

রুপকথার কথক
জার্মানদের স্নো হোয়াইট রূপকথায় কথা বলা এক আয়নার কথা আছে সেই আয়না সবসময় সত্য কথা বলতো জার্মানির বাভারিয়া অঞ্চলের লোর এলাকার জনগণ একসময় বিশ্বাস করতো যে, আয়না সর্বদা সত্য কথা বলে
ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক!
আয়না নিয়ে বহু কুসংস্কার রয়েছে আয়না ভেঙে ফেললে সাত বছরের জন্য দু:খের দিন শুরু হয় বলেও মনে করতো অনেকে
প্রাচীন রোমানরা মনে করতো মানুষের সাতটা করে জন্ম থাকে আর কেউ যদি কোনো জন্মে একটা আয়না ভেঙে ফেলে তবে আয়নার ভাঙা টুকরোগুলোর ভেতরে সেই ব্যক্তির আত্মা আটকা পড়ে যায় আবার পুনর্জন্ম না হওয়া পর্যন্ত সেই ব্যক্তির মুক্তি ঘটে না বলেই মনে করতো রোমানরা
তবে, ভাঙা কাচের সকল টুকরো জড়ো করে যদি মাটির নিচে পুঁতে ফেলা যেতো বা খরস্রোতা নদীর বুকে ফেলে দেয়া যেতো তবে আর দুর্ভাগ্য থাকতো না বলেও মনে করা হতো
তবে, আয়না ভেঙে ফেলাকে পাকিস্তানে দুর্ভাগ্য নয় বরং সৌভাগ্য বা ইতিবাচক ঘটনার ইঙ্গিত বলেই মনে করা হয় অর্থাৎ আয়না ভেঙে গেলে কোনো একটা অশুভ শক্তি গৃহ ছেড়ে যাচ্ছে বা শুভ কিছুর সূচনা ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করা হয়
আর অভিনেতারা তো আয়না নিয়ে রীতিমতো কুসংস্কারে আক্রান্ত কোনো অভিনেতা যদি আয়নার সামনে নিজে সাজ-পোশাক পড়তে থাকে আর তার ঘাড়ের উপর দিয়ে যদি অন্য কেউ উঁকি দিয়ে দেখে তবে সেটিকে একটা খারাপ কিছু বা মন্দ ভাগ্যের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হয়
তাছাড়া মঞ্চের উপর আয়না রাখার ক্ষেত্রেও নাট্যকর্মীদের একটা প্রবল অনীহা রয়েছে একে তো বস্তুটা ভঙ্গুর তার উপরে সেটি আবার বাতির সমস্ত আলো প্রতিফলন করে

পর্দা টেনে দেওয়ার প্রথা
সেই ভিক্টোরিয়ান যুগের ব্রিটেনে বিশ্বাস করা হতো যে, মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্য শুরু হবার সময় সেই বাড়িতে থাকা সকল আয়না পর্দা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে কারণ তখন মনে করা হতো যে, পর্দা দিয়ে আয়নাগুলো সব ঢেকে না দিলে মৃত ব্যক্তির আত্মাটা কোনো আয়নার ভেতরে ঢুকে আটকা পড়ে যেতে পারে

প্রেতসাধনার উপাদান
আয়না নিয়ে 'ব্লাডি মেরি' নামের একটি খেলার কথা পুরোনো ডাকিনীবিদ্যা বিষয়ক লেখায় পাওয়া যায় কখনো খেলেছেন এই খেলা? এটি খুবই ভয়-ধরানো বুকের পাটা না থাকলে এই খেলার নামটাও নেয়া ঠিক না
কোনো এক গভীর অন্ধকার রাতে, হাতে একটা মোমবাতি নিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আপনি তিনবার বলবেন 'ব্লাডি মেরি' নির্দিষ্ট কিছু আচারও পালন করবেন তারপর চোখ বন্ধ করবেন
যখন চোখ খুলবেন তখন বুঝবেন যে ঠিক আপনার পেছনেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন ব্লাডি মেরি মনের এই ট্রিকটা বা ট্রিকের ধাক্কাটা নিতে পারলে, ব্লাডি মেরিকে দেখে চিৎকার দিয়ে আপনি হয়তো ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন

তীক্ষ্ম স্মৃতি
প্রাচীন কিছু সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হতো যে, আয়নার মধ্যে মানুষের আত্মা বা মানুষের ভেতরের প্রকৃত সত্ত্বার ছায়া পড়ে এ ধারণাটি হয়তো এই বিশ্বাস থেকে এসেছে যে, ভ্যাম্পায়ার বা মানুষরূপী রাক্ষসদের আত্মা নেই আর তাই তাদের কোনো ছায়া পড়ে না
অতএব, আপনি যখন আজকে আবার আয়নার নিজের দিকে তাকাবেন একটু ভালো করে খেয়াল করে দেখবেন তো, সেখানে কার ছায়া পড়েছে? যাকে দেখা যাচ্ছে, সে সত্যিকারের আপনিই তো?


from মিস বাংলা http://bit.ly/2UTHzNY

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad