গরম পড়লে আমজনতা মশগুল হয়ে যান আম নিয়ে। গোলাপখাস, হিমসাগর, ল্যাঙড়া, মধুগুলগুলি, ফজলি— কোন আম কত সুস্বাদু তা নিয়ে চলে চুলচেরা রসালো বিশ্লেষণ। তবে আজকাল ডায়েট কনশাস আমবাঙালি আমের ক্যালোরির কথা ভেবে কতটা আম খাবেন বা আদৌ খাবেন কি না, তা নিয়ে বেশ টানাপোড়েনে ভোগেন। সঙ্গে যদি ডায়াবেটিক হন, তাহলে তো আর কথাই নেই। তবে, নিশ্চিন্ত হয়ে এবার ফলের রাজাকে কাছে টেনে নিতেই পারেন। এমনকি ডায়াবেটিস থাকলেও।
ডায়াবেটিস যাঁদের আছে, তাঁরা চিন্তায় পড়ে যান এতে থাকা মিষ্টত্ব নিয়ে। এই মিষ্টি তাঁদের সুগার লেভেল কতটা বাড়িয়ে দিতে পারে তা নিয়ে কপালে পড়ে ভাঁজ। চলতে থাকে মন আর মাথার সংঘাত।
তবে বিজ্ঞান বলছে, কোনও ফল খাওয়ার আগে ফলের মিষ্টি ভাবটা নিয়ে না ভেবে, তার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা জিআই নিয়ে ভাবা দরকার। কী এই জিআই? নির্দিষ্ট একটা সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ কোনও ফল থেকে আপনার রক্তে কতটা গ্লুকোজ় অ্যাবজ়র্বড হচ্ছে, সেই সূচক। তাই জিআই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দিল্লির BeatO health app-এর ডায়াবেটিস এডুকেটর অংশিকা গুপ্তা বলছেন, “ ডায়াবেটিস আছে যাঁদের, তাঁরা ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট একটা যে কোনও ফল থেকে পেলে সেটা খেতেই পারেন। তাতে ক্ষতি নেই। তবে তার বেশি হলে মুশকিল। ”
তাহলে একজন ডায়াবেটিক পেশেন্ট কতটা আম খেতে পারেন?
অংশিকা বলছেন, “একটা স্লাইস খেতে পারেন, বা কাটা আম ছোট এক কাপ খেতে পারেন। তবে ম্যাঙ্গো শেক, জুস বা স্মুদি খাবেন না। কারণ এতে কোনও ফাইবার পাবেন না। তাই ফাইবার সহ খান, যা আপনার সুগার লেভেল কন্ট্রোলে রাখবে। ”
মনোবিদ এবং পুষ্টিবিজ্ঞানী রিতেশ বাওয়ারি বলছেন, “আমে আছে লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। গ্লুকোজ়, ফ্রুক্টোজ়ও আছে এতে। গ্লুকোজ়ের জন্যই ব্লাডসুগার বেড়ে যেতে পারে এই চিন্তা হয় ঠিকই, তবে আমে যে পরিমাণ গ্লুকোজ় আছে তাতে ক্ষতি নেই। ডায়াবেটিক না হলে, দিনে একটা বা দুটো করে আম আপনি খেতেই পারেন। তবে ডায়াবেটিক হলে জুস বা স্মুদি না খেয়ে আম কেটে খান। এতে থাকা ফাইবার আপনার সুগার লেভেল বাড়তে দেবে না। ”
তাঁর আরও পরামর্শ, “টাইপ টু ডায়াবেটিস আছে যাঁদের, তাঁরা অকেশনালি আম খাবেন। এমনিই তাঁদের ব্লাডসুগার লেভেল বেড়ে থাকে, তার উপর বেশি মাত্রায় আম খেলে ক্যালোরি ইনটেক বেশি হবে। যা থেকে তাঁদের মধ্যে ওবেসিটি আসতে পারে। আর মোটা হলে যে একাধিক রোগ কান টানলে মাথা আসার মতো করে আসে তা তো আমরা সকলেই জানি। তাই কার্ডিও ভাসকুলার ডিসিজ়, ডিমেনশিয়া এবং স্ট্রোক এড়াতে আপনাকে আম খাওয়ার ক্ষেত্রে একটু রাশ টানতেই হবে। ডায়াবেটিস থাকলে এই সব সমস্যাই চক্রাকারে আপনাকে অ্যাটাক করে যাবে। তাই সেটা বুঝে আম খান। ”
আমের মধ্যে যে পুষ্টিগুণ আছে, তা না জেনেই হয় তো এতদিন আমরা আম খেতাম। জানুন সেগুলো কী কী–
১.আপনার হজম ভালো হতে পারে আম খেলে। আমে থাকা এঞ্জা়ইম খাবারের প্রোটিনকে সহজে ভেঙে দেয়, তাই গুরুপাক হলেও সহজে খাবার হজম হয়ে যায় আম খেলে।
২. আমে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও থাকে। যা আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে।
৩. ভিটামিন সি-এর পরিমাণও এতে থাকে যথেষ্ট, যা সহজে আপনাকে এনার্জি দেবে সারাদিন।
৪.আমে থাকা বিটা ক্যারোটিন আপনার দৃষ্টিশক্তি ভালো করে। এই বিটা ক্যারোটিন আসলে ভিটামিন-এ র ভালো উৎস।
মনোবিদ এবং পুষ্টিবিজ্ঞানী রিতেশ বাওয়ারি বলছেন, “ আমে কোনও ফ্যাট নেই। ১০০ ক্যালোরির এই ফলে ২৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩ গ্রাম ফাইবার আছে। তবে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম থাকলেও কোনও সোডিয়াম নেই। আছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি সিক্স, ভিটামিন-ই এবং কে। ফলিক অ্যাসিডের উৎস ফোলেটও পাওয়া যায় আম থেকে। ”
আরও একজন পুষ্টিবিজ্ঞানী পায়েল কোঠারি বলছেন, “ আপনি চকচকে স্কিন চাইলে আম খেতে পারেন, এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনাকে সরসময় চকচকে এবং এনার্জেটিক রাখবে। শরীরের অনেক সমস্যার শুরু হয় প্রদাহ থেকে। বিভিন্ন জায়গার প্রদাহ থেকে ক্রনিক অনেক অসুখ হয়। কিন্তু এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি-সিক্স, ভিটামিন সি ওই প্রদাহ থেকেই আপনাকে রেহাই দেবে। এতে থাকা সলিউবল আর ইনসলিউবল ফাইবারগুলো আপনার ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে বেশ কিছু ভালো ব্যাকটিরিয়া তৈরিতে সাহায্য করে। এছাড়াও বিকেল ৫টার আগে প্রতিদিনই একটা করে আম খেয়ে নিলে, আপনার আর সুগার ক্রেভিং থাকবে না। ফলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে না। মুড সুইংও থাকবে আয়ত্তে। আর অন্যান্য সুগারি জুস, কার্বোহাইড্রেট, প্রসেসড ফুডের তুলনায় আম খাওয়া ভালো। এতে থাকা ফাইবার, ফ্যাট, প্রোটিন আপনার রক্তের গ্লুকোজ়ের মাত্রা নিয়্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ”
তাহলে আর অত না ভেবে, আমের মরশুমে নিজের মনকে কষ্ট না দিয়ে আম খেতে থাকুন ।
from মিস বাংলা http://bit.ly/2GR4zIi
No comments:
Post a Comment