নরমুণ্ড, তলোয়ার হাতে উত্তাল হয় সন্ন্যাসীদের পৈশাচিক গাজন - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday, 17 April 2019

নরমুণ্ড, তলোয়ার হাতে উত্তাল হয় সন্ন্যাসীদের পৈশাচিক গাজন



বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই উৎসবের অন্দরে লুকিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পৈশাচিক কাহিনী যার অন্যতম ‘শকুন নৃত্য’
মূলত বর্ধমানের, কাটোয়া অঞ্চলের শিবের গাজনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য শকুন নাচ কালকেপাতার মতো শৈব ন্যাসীদের নাচ, গান৷ ফাগুনমাসে নরমুন্ড সংগ্রহ করা হয় দলে একজন মূল গায়ক থাকে তাকে ওস্তাদ বলা হয় এই ওস্তাদই নরমুণ্ড বা মানবদেহ জোগাড় করে গ্রামের বাইরে গাছে টাঙিয়ে রাখে গোটা চৈত্র মাস ধরে এগুলো পুজো করা হয়
এরপর শিবের ফল উৎসবের গভীর রাতে সাজগোজ করেন একজন শিব সাজেন বাকিরা কালী বা ভূত পেত্নী লাল রঙ দিয়ে চোখ আঁকা হয় পরনে লাল-কালো ঘাঘরা কোমরে ঘণ্টা নেউর হাতে থাকে চকচকে তলোয়ার,রাম দা, হেঁসো টাঙি একজন শাঁখ বাজান গভীর রাতে এদের আগমন হয় মুখে তারস্বরে শিবের নাম নিতে থাকে তারা ঢাকি একটি বাঁধা তাল বাজিয়ে তাদেরকে গাজনতলায় নিয়ে আসে এবার মরার মাথাগুলিকে আসরের মাঝে রেখে গোল হয়ে হয়ে বসে শুরু হয় বিলম্বিত লয়ে করুণ সঙ্গীত বিশেষ বাজনায় জমে ওঠে পালাগান ২০-২৫ জন শিল্পী থাকেন অনুষ্ঠানটি দুটি ভাগে বিভক্ত গান এবং নাচে গানে প্রতিটি কলির শেষে ধুয়োতে ফিরে আসতে হয়প্রতি কলির ২ চিহিন্ত পংক্তি দুবার গাইতে হয় দু’রকম সুরে প্রথম বার গাওয়ার পার বাজনার জন্য ছাড় থাকে ঢাকি আট মাত্রার কাহারবা ছন্দে ঢাক বাজান সঙ্গে বাজে কাঁসর যা ধীরে ধীরে দ্রুত হয়
গানের শেষে শুরু হয় শকুন নাচ নরমুন্ড মাঝে রেখে সবাই গোল করে দাঁড়ায়এদের শকুন বলা হয় গোলের বাইরে দু’জন শিয়াল নাচের দুটি ভাগপ্রথম ভাগে ঢাকে র তালে শকুন রা দু’হাত ছড়িয়ে পাখির মতো উড়বে হঠাৎ তারা কোনও এক শ্মশান ক্ষেত্রে তারা যেন নরমুন্ড দেখতে পায় এবার শকুনরা অর্থাৎ সন্ন্যাসীরা বসে পড়ে এবার শুরু হয় দ্বিতীয় ভাগ ঢাকের বোল বদলে যায় বাজনার লয় অনুসারে ধীর থেকে দ্রুত লয়ে তাদের ওড়ার ভঙ্গি দেখা যায় বাইরের শিয়াল রা ছুটে আসছে নরমুন্ডের দিকে ছিটকে যায় শকুনরা এভাবে লড়াই চলে শকুন শিয়ালের নাচের শেষে শকুনের দল শিয়ালের বাধা অতিক্রম করে দখল নেয় নরমুন্ডেরএক নাটকীয় ও চমকপ্রদ দৃশ্যের সৃষ্টি হয় ঢাক বাজে কাহারবা
অনেকে আবার মনে করেন বৌদ্ধ বজ্রযানী সম্প্রদায়ের এক বিশেষ ধর্মীয় আচার-কৃত্য যা পরবর্তীকালে শৈবসাধনাতে অনুপ্রবেশ করেছে তাদের এই গানে কিছু তিব্বতী শব্দও পাওয়া যায় তাই ঐতিহাসিকরা মনে করেন এই শিব সন্ন্যাসীরা আসলে বৌদ্ধ বজ্রযান শাখার অংশ
দেবাদিদেব মহাদেব শুধু মহাকাল রুদ্র নন, তিনি নটরাজ নাচ গানের আদি দেবতা নাচুনি বেহুলা তাঁকে নাচ দেখিয়ে সন্তুষ্ট করেন মৃত পতি লখিন্দরের প্রাণও আদায় করে ফিরেছিলেন শিব আরাধনা বারোমাস হলেও রোদে কাঠ ফাটা চৈত্র মাসে হয় গান নাচের এলাহি আয়োজন যা গাজন নামে পরিচির ঢাক ঢোল নাল মাদল খোল মৃদঙ্গ খঞ্জনি ঝাঁজর আড়বাঁশির সুরে গ্রামবাংলা নাচে গানে মেতে ওঠে
গানগুলির মধ্যে জনপ্রিয় ধুলো ভাঙার গান,খেস্যা গান, বাধাইগান, রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বোলান গান এর উপর নানা ধরণের প্রাচীন লোকনৃত্যে জমজমাট হয়ে ওঠে শিবের গাজন সংস্কৃতি শৈব সাধনার প্রত্নস্মৃতি হরপ্পা সভ্যতায় পাওয়া যায়

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad