সাম্প্রদায়িকতার অসুখে ভুগছে সারা দেশ। নানা রকম সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যু ঘিরে প্রায়ই ধর্মীয় ভেদাভেদ নির্মিত হচ্ছে মানুষের
মধ্যে। বাড়ছে ঘৃণা, বাড়ছে আঘাত, বাড়ছে দ্বন্দ্ব। এরকমই আবহে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ে উঠল মুম্বইয়ের
সাইফি হাসপাতালে। এক অভূতপূর্ব অঙ্গদানের সাক্ষী হলেন চিকিৎসকেরা। চলতি মাসের ১৪ তারিখ ছিল বিশ্ব কিডনি দিবস। ওই দিনই দুই রোগীর কিডনি
প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধু অঙ্গদানের সচেতনতা
বাড়ানোর জন্যই নয়। সেই সঙ্গে আরও একটি বিশেষ কারণে এই প্রতিস্থাপন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রের থানের বাসিন্দা নাজরিন প্যাটেল এবং বিহারের বাসিন্দা
সত্যদেবী তাঁদের স্বামী নাদিম ও রামসারথকে নিয়ে এসেছিলেন মুম্বইয়ের সাইফি হাসপাতালে। ৫১ বছরের নাদিম এবং ৫৩ বছরের রামসারথ– দু’জনেই ভুগছিলেন কিডনির দুরারোগ্য অসুখে। নিরাময়ের জন্য প্রতিস্থাপন জরুরি ছিল তাঁদের। কিন্তু কারও ক্ষেত্রেই
দাতা মিলছিল না। সত্যদেবী ও নাজরিন নিজেদের কিডনি স্বামীদের জন্য দান করতে রাজি হলেও, স্বামীদের সঙ্গে ক্রাইটেরিয়া ম্যাচ করছিল না তাঁদের। কিন্তু চিকিৎসকেরা দাতা-গ্রহীতার তালিকা মেলাতে গিয়ে লক্ষ করেন, নাজরিনের ব্লাডগ্রুপ এবং অন্যান্য ক্রাইটেরিয়া মিলে যাচ্ছে রামসারথের
চাহিদার সঙ্গে। আবার কাকতালীয় ভাবে, নাদিমের যে কিডনি দরকার, তার সব ক্রাইটেরিয়া মিলে যাচ্ছে সত্যদেবীর সঙ্গে। দুই পরিবারকেই এ কথা জানান চিকিৎসকেরা। প্রথমে একটু দ্বিধা ছিল। কারণ দুই পরিবারের ধর্ম
অভ্যাসে ফারাক রয়েছে। এই ধর্ম অনেক সময়েই এই সমস্ত চিকিৎসার অন্তরায় হয়, এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে চিকিৎসকেদের। রোগীর চরম বিপদের সময়েও
অন্য ধর্মের রক্ত নিতে অস্বীকার করেছে রোগী পরিবার, এমনটাও ঘটেছে। তাই এই ক্ষেত্রেও নাজরিন ও সত্যদেবী নিজের স্বামীর জন্য নয়, পরস্পরের স্বামীর জন্য কিডনি দিতে পারবেন– এ কথা একটু দ্বিধার
সঙ্গেই জানিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হাসপাতাল জানানো মাত্রই রাজি হয়ে যান নাজরিন এবং সত্যদেবী। তাঁদের দু’জনের কাছেই ধর্মের ঊর্ধ্বে ছিল স্বামীর সুস্থতা। ফলে নাজরিনের কিডনি পেলে যদি রামসারথ সুস্থ হন, এবং সত্যদেবীর কিডনি পেলে, নাদিম– এতে কারওই কোনও আপত্তি ছিল না।
সব নিয়ম মেনে এবং খুঁটিনাটি পরীক্ষা
করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় দুই দম্পতিকে। পরপর দু’টি প্রতিস্থাপনের
অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। অস্ত্রোপচারের পরে দিন কয়েক পর্যবেক্ষণে রাখার পরে অস্ত্রোপচার
সফল বলে জানান তাঁরা। এখনও অবশ্য সংক্রমণের ভয়ে কড়া নিয়মের মধ্যে আছেন রামসারথ ও নাদিম। তাঁদের স্ত্রী সত্যদেবী এবং নাজরিন সুস্থ হয়েছেন।
দুই ভিন্নধর্মী পরিবার এই ভাবে একে
অপরের সঙ্গে জীবনের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্ব কিডনি দিবসে। চিকিৎসকেরা বলছেন, কিডনি প্রতিস্থাপনের সাফল্যে এই ঘটনা যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ
একটা মাইলস্টোন হয়ে রইল, তেমনই সম্প্রীতির ইতিহাসেও এই ঘটনার প্রভাব অনস্বীকার্য। এখন আশা, দুই দাতা ও দুই গ্রহীতাই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেন বাড়ি ফিরতে
পারেন।

No comments:
Post a Comment