একরাশ সংশয় নিয়ে আমজাদ খান বেরিয়ে যাওয়ার
পরে রমেশ বললেন এই ছোকরা তো একদম ফিট ,কিন্তু কত দিতে হবে একে ? সেলিম খান বললেন - সে যাহোক কিছু দিয়ে দিও , যা দেবে তাতেই রাজি হয়ে যাবে , ওর স্ত্রী শাহিদা অন্তঃস্বত্বা , আর নিজের বৌকে ও প্রাণের চেয়েও ভালোবাসে । একটা আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে , টাকার দরকার আছে । - OK তাহলে
confirm
করে দাও আর বলে দাও 15000 টাকা দেবো । ....বাকিটা ইতিহাস
। ....
1973 সালের
এক সন্ধ্যা ,
ভীষন টেনশনে পরিচালক রমেশ সিপ্পি , sholey এর final
casting এর থেকে গব্বর সিং এর ভূমিকায় অভিনয়ে জন্য নির্বাচিত ড্যানিকে
আফগানিস্তান চলে যেতেই হচ্ছে " ধর্মাত্মা " ছবির শুটিং এর জন্যে ,
ড্যানি তার অক্ষমতার কথা জানিয়ে দিয়েছেন । এখন
উপায় ?
চিত্রনাট্যকার সেলিম জাভেদ পরামর্শ দিলেন রঞ্জিত, প্রেম চোপড়া এদের মধ্যেই কাউকে বেছে নাও । না হলে সুনীল
দত্ত সাহেবকেই আরেকবার অনুরোধ কর । অনেকে বলল পুরানো সিদ্ধান্ত
অনুযায়ী ধর্মেন্দ্রকেই ঠাকুরের চরিত্রে পাঠিয়ে সঞ্জীব কুমার কে গব্বর cast করা হোক আর শত্রুঘ্ন সিনহাকে recall করে ভীরু তে cast
করা হোক , অমিতাভ জয়রাজ হিসাবে যেমন আছেন তেমনি
থাকুন ( তথ্যসূত্র :- Sholey , The Making of a classic , Anupama Chopra )
। নিমরাজি হলেন পরিচালক
রমেশ । কিন্তু
মন চাইছিল না । এত
টাকা জলের মতো খরচ করবেন ,
sholey তার Dream Project । শেষে কিনা এত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রেই compromise ! এটা বুঝতে পারছিলেন জাভেদ আখতার । রমেশকে বললেন
- কোনও নতুন মুখের ওপরে বাজী খেলবে ? I am a born gambler , তুমহারে
নজর মে হ্যায় কোই বন্দা ? ঠিক এই ভাষাতেই উত্তর দিয়েছিলেন রমেশ
সিপ্পি । জয়ন্তর
( অভিনেতা জয়ন্ত খান ) ছোট ছেলেটা খুব ভাল থিয়েটার করছে , একবার
ডেকে দেখতে পারো । - জয়ন্তর ছোট ছেলে মানে
আমজাদ ?
জাভেদ আখতারের পরামর্শে রমেশ সিপ্পির বান্দ্রার অফিসে এলেন আমজাদ খান
, মেকআপ হল , স্ক্রিন টেস্ট হল । ভেতরে
ভেতরে খুব উচ্ছ্বসিত রমেশ আর সেলিম জাভেদ বাইরে কিছু প্রকাশ না করে বললেন - ঠিক আছে
এখন যাও ,পরে জানাবো । একরাশ সংশয় নিয়ে আমজাদ
খান বেরিয়ে যাওয়ার পরে রমেশ বললেন এই ছোকরা তো একদম ফিট ,কিন্তু
কত দিতে হবে একে ? সেলিম খান বললেন - সে যাহোক কিছু দিয়ে দিও
, যা দেবে তাতেই রাজি হয়ে যাবে , ওর স্ত্রী
শাহিদা অন্তঃস্বত্বা , আর নিজের বৌকে ও প্রাণের চেয়েও ভালোবাসে
। একটা
আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে , টাকার দরকার আছে । - OK তাহলে confirm করে দাও আর বলে দাও
15000 টাকা দেবো । ....বাকিটা ইতিহাস ।
অসাধারন প্রতিভাধর ক্ষণজন্মা এই অভিনেতা 12 নভেম্বর 1940,জন্মগ্রহণ
করেন । হিন্দী
ছবির প্রথম খলনায়ক যার বিপুল জনপ্রিয়তা আর স্টারডমকে নায়কেরাও হিংসা করতো । Body language, Dialogue throwing and Seneca of
timings ছিল
অসাধারণ । আশ্চর্য
লাগে যে শোলে ছবিতে সবার শুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আমজাদ খানের অভিনয় নিয়ে ইউনিটের
কেউ সন্তুষ্ট ছিল না ,
আমজাদ নিজেও সেটা বুঝেছিলেন আর ভেতরে ভেতরে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিলেন । অনেকেই
বলছিলেন এর দ্বারা হবে না ,
প্রতিষ্ঠিত কাউকে দিয়ে কাজ উদ্ধার করে নেওয়া হোক । আর
যেহেতু ইংরেজিটা খুব ভাল বলে সেই জন্য বিদেশী ফাইট কম্পোজিটার দের সাথে দোভাষীর কাজ
চালিয়ে নেওয়ার জন্যে ছোকরাকে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হোক । সেলিম
জাভেদও আমজাদ খানকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন , কিন্তু নিজের জেদে অটল
থাকলেন রমেশ সিপ্পি । সেই জেদ আত্মবিশ্বাস
জোগাল আমজাদকেও । নিজের
প্রতি আস্থার পূর্ন মর্যাদা দিলেন । শোলে রিলিজের আগে নিজের
অন্তঃস্বত্বা স্ত্রীর হাত ধরে গভীর রাত্রে রাস্তায় হাঁটতে বেড়াতেন আমজাদ । শহরের
ধার জুড়ে শোলের বিশাল বিশাল কাট আউট গুলোতে নিজের ছবির দিকে আঙ্গুল তুলে স্ত্রী শাহিদাকে
বলতেন - দ্যাখো ,
a star is born , আমাদের দুঃখের দিন খুব তাড়াতাড়ি শেষ হতে চলেছে । পরবর্তী
ক্ষেত্রে শোলের প্রিমিয়ার হয় বম্বের রিগ্যাল টকিজে । ছবি দেখার পরে
সত্যজিৎ রায়,
রাজকাপুর, হেমন্ত মুখার্জি , শশী কাপুরের মুখে শুধুই আমজাদ খানের নাম । উচ্ছ্বসিত সত্যজিৎ
ছবি শেষ হওয়ার পরেই ডেকে পাঠালেন আমজাদকে , বললেন আমি একটা হিন্দী ছবির
( শতরঞ্জ কে খিলাড়ি ) কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু করবো , তোমাকে দরকার
হবে । প্রিমিয়ার
এর পরেই ঘটল সেই অবাঞ্ছিত ঘটনাটা , শুটিং স্পটে নিজের পদে পদে অপমানিত
হওয়ার কথা ভোলেননি ,সারা জীবন মাথা উঁচু করে চলা আমজাদ । ফ্লোরের
মধ্যেই তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন আমজাদ খান এবং চিত্রনাট্যকার সেলিম খান ও জাভেদ
আখতার । আমজাদ
খান চিৎকার করে বলছিলেন - তখন তো অনেককিছু বলেছিলে , এখন তোমাদের মুখে কথা
নেই কেন ? এই ইগোর লড়াইয়ের পরিণতিতেই রমেশ সিপ্পির পরিচালনায়
এবং সেলিম জাভেদের চিত্রনাট্যে আর কোনদিনও অভিনয় করতে দেখা যায়নি আমজাদকে, শোলেই প্রথম , শোলেই শেষ । যার
খেসারত দিয়েছে অগণিত সিনেমাপ্রেমী মানুষ । The Great Gambler ছবির শুটিং
এ গোয়ায় মারাত্মক ভাবে আহত হন । জীবন বেঁচে যায় কিন্তু
চিকিৎসাধীন থাকাকালীন কড়া ডোজের এন্টিবায়োটিক নেওয়ার জন্য পরে Obesity রোগে আক্রান্ত হন , শরীরে চলে আসে অত্যাধিক চর্বির আধিক্য
। যা
মৃত্যুর আগে পর্যন্ত পিছু ছাড়েনি এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ায় । philosophy তে মাস্টার ডিগ্রী করেছিলেন
এই উচ্চশিক্ষিত অভিনেতা । ইংরেজিতে দখল ছিল অসাধারন
।
শোলে ছাড়াও অসংখ্য ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় মাতিয়ে দিয়েছেন
দর্শককে । শোলে
কে সরিয়ে রাখলে আমজাদ খানের খলনায়ক হিসাবে আমার সবচেয়ে প্রিয় দুটো ছবির নাম "
ইনকার " এবং " বেশরম " এছাড়া ছাড়াও ক্যামিও রোলে মুকাদ্দার কা সিকন্দর
এর দিলাওয়ার খান আমার এত প্রিয় ছিল যে ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে যখন মারপিট মারপিট খেলতাম
তখন আমার নাম সবসময়ে থাকতো দিলাওয়ার খান । চরিত্রাভিনেতা হিসেবে
ওনার " কুরবানী " ও আমার আরেকটা প্রিয় ছবি । " অনুসন্ধান
" এবং " বন্দী " নামের দুটি বাংলা ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন । অভিনেতা
হিসাবে শেষ ছবি ছিল " রুদালি " ।
মতাদর্শগত ভাবে বামপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী ছিলেন , " আমির আদমী গরীব আদমী " বলে একটা ছবি পরিচালনা এবং প্রজজনাও করেছিলেন । ইন্ডিয়ান
পিপলস এন্ড থিয়েটার এসোসিয়েশন এরসাথে যুক্ত ছিলেন ( IPTA) । সিনে আর্টিস্ট এসোসিয়েশন
এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন ,
শিল্পীদের দাবিদাওয়া , জুনিয়র আর্টিস্টদের সুখ
দুঃখ নিয়ে সরকারের সাথে অনেকবার আলোচনায় বসেছেন । যতদিন আমজাদ
খান প্রার্থী ছিলেন ওনার বিপরীতে কেউ কোনদিন প্রার্থী হয়নি । গরীব মানুষদের
জন্যে বস্তিতে ফ্রিতে চিকিৎসা এবং এমবুলেন্স এর ব্যবস্থা করেছিলেন ।
অসাধারণ প্রতিভাধর এই অভিনেতা 27 জুলাই 1993 সালে আমাদের
ছেড়ে চলে যান ।

No comments:
Post a Comment