স্মৃতির পাতায় - আমজাদ খান - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday, 21 April 2019

স্মৃতির পাতায় - আমজাদ খান



একরাশ সংশয় নিয়ে আমজাদ খান বেরিয়ে যাওয়ার পরে রমেশ বললেন এই ছোকরা তো একদম ফিট ,কিন্তু কত দিতে হবে একে ? সেলিম খান বললেন - সে যাহোক কিছু দিয়ে দিও , যা দেবে তাতেই রাজি হয়ে যাবে , ওর স্ত্রী শাহিদা অন্তঃস্বত্বা , আর নিজের বৌকে ও প্রাণের চেয়েও ভালোবাসে একটা আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে , টাকার দরকার আছে - OK তাহলে confirm করে দাও আর বলে দাও 15000 টাকা দেবো ....বাকিটা ইতিহাস ....
1973 সালের এক সন্ধ্যা , ভীষন টেনশনে পরিচালক রমেশ সিপ্পি , sholey এর final casting এর থেকে গব্বর সিং এর ভূমিকায় অভিনয়ে জন্য নির্বাচিত ড্যানিকে আফগানিস্তান চলে যেতেই হচ্ছে " ধর্মাত্মা " ছবির শুটিং এর জন্যে , ড্যানি তার অক্ষমতার কথা জানিয়ে দিয়েছেন এখন উপায় ? চিত্রনাট্যকার সেলিম জাভেদ পরামর্শ দিলেন রঞ্জিত, প্রেম চোপড়া এদের মধ্যেই কাউকে বেছে নাও না হলে সুনীল দত্ত সাহেবকেই আরেকবার অনুরোধ কর অনেকে বলল পুরানো সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্মেন্দ্রকেই ঠাকুরের চরিত্রে পাঠিয়ে সঞ্জীব কুমার কে গব্বর cast করা হোক আর শত্রুঘ্ন সিনহাকে recall করে ভীরু তে cast করা হোক , অমিতাভ জয়রাজ হিসাবে যেমন আছেন তেমনি থাকুন ( তথ্যসূত্র :- Sholey , The Making of a classic , Anupama Chopra ) নিমরাজি হলেন পরিচালক রমেশ কিন্তু মন চাইছিল না এত টাকা জলের মতো খরচ করবেন , sholey তার Dream Project শেষে কিনা এত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রেই compromise ! এটা বুঝতে পারছিলেন জাভেদ আখতার রমেশকে বললেন - কোনও নতুন মুখের ওপরে বাজী খেলবে ? I am a born gambler , তুমহারে নজর মে হ্যায় কোই বন্দা ? ঠিক এই ভাষাতেই উত্তর দিয়েছিলেন রমেশ সিপ্পি জয়ন্তর ( অভিনেতা জয়ন্ত খান ) ছোট ছেলেটা খুব ভাল থিয়েটার করছে , একবার ডেকে দেখতে পারো - জয়ন্তর ছোট ছেলে মানে আমজাদ ? জাভেদ আখতারের পরামর্শে রমেশ সিপ্পির বান্দ্রার অফিসে এলেন আমজাদ খান , মেকআপ হল , স্ক্রিন টেস্ট হল ভেতরে ভেতরে খুব উচ্ছ্বসিত রমেশ আর সেলিম জাভেদ বাইরে কিছু প্রকাশ না করে বললেন - ঠিক আছে এখন যাও ,পরে জানাবো একরাশ সংশয় নিয়ে আমজাদ খান বেরিয়ে যাওয়ার পরে রমেশ বললেন এই ছোকরা তো একদম ফিট ,কিন্তু কত দিতে হবে একে ? সেলিম খান বললেন - সে যাহোক কিছু দিয়ে দিও , যা দেবে তাতেই রাজি হয়ে যাবে , ওর স্ত্রী শাহিদা অন্তঃস্বত্বা , আর নিজের বৌকে ও প্রাণের চেয়েও ভালোবাসে একটা আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে , টাকার দরকার আছে - OK তাহলে confirm করে দাও আর বলে দাও 15000 টাকা দেবো ....বাকিটা ইতিহাস
অসাধারন প্রতিভাধর ক্ষণজন্মা এই অভিনেতা 12 নভেম্বর 1940,জন্মগ্রহণ করেন হিন্দী ছবির প্রথম খলনায়ক যার বিপুল জনপ্রিয়তা আর স্টারডমকে নায়কেরাও হিংসা করতো Body language, Dialogue throwing and Seneca of timings ছিল অসাধারণ আশ্চর্য লাগে যে শোলে ছবিতে সবার শুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আমজাদ খানের অভিনয় নিয়ে ইউনিটের কেউ সন্তুষ্ট ছিল না , আমজাদ নিজেও সেটা বুঝেছিলেন আর ভেতরে ভেতরে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিলেন অনেকেই বলছিলেন এর দ্বারা হবে না , প্রতিষ্ঠিত কাউকে দিয়ে কাজ উদ্ধার করে নেওয়া হোক আর যেহেতু ইংরেজিটা খুব ভাল বলে সেই জন্য বিদেশী ফাইট কম্পোজিটার দের সাথে দোভাষীর কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্যে ছোকরাকে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হোক সেলিম জাভেদও আমজাদ খানকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন , কিন্তু নিজের জেদে অটল থাকলেন রমেশ সিপ্পি সেই জেদ আত্মবিশ্বাস জোগাল আমজাদকেও নিজের প্রতি আস্থার পূর্ন মর্যাদা দিলেন শোলে রিলিজের আগে নিজের অন্তঃস্বত্বা স্ত্রীর হাত ধরে গভীর রাত্রে রাস্তায় হাঁটতে বেড়াতেন আমজাদ শহরের ধার জুড়ে শোলের বিশাল বিশাল কাট আউট গুলোতে নিজের ছবির দিকে আঙ্গুল তুলে স্ত্রী শাহিদাকে বলতেন - দ্যাখো , a star is born , আমাদের দুঃখের দিন খুব তাড়াতাড়ি শেষ হতে চলেছে পরবর্তী ক্ষেত্রে শোলের প্রিমিয়ার হয় বম্বের রিগ্যাল টকিজে ছবি দেখার পরে সত্যজিৎ রায়, রাজকাপুর, হেমন্ত মুখার্জি , শশী কাপুরের মুখে শুধুই আমজাদ খানের নাম উচ্ছ্বসিত সত্যজিৎ ছবি শেষ হওয়ার পরেই ডেকে পাঠালেন আমজাদকে , বললেন আমি একটা হিন্দী ছবির ( শতরঞ্জ কে খিলাড়ি ) কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু করবো , তোমাকে দরকার হবে প্রিমিয়ার এর পরেই ঘটল সেই অবাঞ্ছিত ঘটনাটা , শুটিং স্পটে নিজের পদে পদে অপমানিত হওয়ার কথা ভোলেননি ,সারা জীবন মাথা উঁচু করে চলা আমজাদ ফ্লোরের মধ্যেই তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন আমজাদ খান এবং চিত্রনাট্যকার সেলিম খান ও জাভেদ আখতার আমজাদ খান চিৎকার করে বলছিলেন - তখন তো অনেককিছু বলেছিলে , এখন তোমাদের মুখে কথা নেই কেন ? এই ইগোর লড়াইয়ের পরিণতিতেই রমেশ সিপ্পির পরিচালনায় এবং সেলিম জাভেদের চিত্রনাট্যে আর কোনদিনও অভিনয় করতে দেখা যায়নি আমজাদকে, শোলেই প্রথম , শোলেই শেষ যার খেসারত দিয়েছে অগণিত সিনেমাপ্রেমী মানুষ The Great Gambler ছবির শুটিং এ গোয়ায় মারাত্মক ভাবে আহত হন জীবন বেঁচে যায় কিন্তু চিকিৎসাধীন থাকাকালীন কড়া ডোজের এন্টিবায়োটিক নেওয়ার জন্য পরে Obesity রোগে আক্রান্ত হন , শরীরে চলে আসে অত্যাধিক চর্বির আধিক্য যা মৃত্যুর আগে পর্যন্ত পিছু ছাড়েনি এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ায় philosophy তে মাস্টার ডিগ্রী করেছিলেন এই উচ্চশিক্ষিত অভিনেতা ইংরেজিতে দখল ছিল অসাধারন
শোলে ছাড়াও অসংখ্য ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় মাতিয়ে দিয়েছেন দর্শককে শোলে কে সরিয়ে রাখলে আমজাদ খানের খলনায়ক হিসাবে আমার সবচেয়ে প্রিয় দুটো ছবির নাম " ইনকার " এবং " বেশরম " এছাড়া ছাড়াও ক্যামিও রোলে মুকাদ্দার কা সিকন্দর এর দিলাওয়ার খান আমার এত প্রিয় ছিল যে ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে যখন মারপিট মারপিট খেলতাম তখন আমার নাম সবসময়ে থাকতো দিলাওয়ার খান চরিত্রাভিনেতা হিসেবে ওনার " কুরবানী " ও আমার আরেকটা প্রিয় ছবি " অনুসন্ধান " এবং " বন্দী " নামের দুটি বাংলা ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা হিসাবে শেষ ছবি ছিল " রুদালি "
মতাদর্শগত ভাবে বামপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী ছিলেন , " আমির আদমী গরীব আদমী " বলে একটা ছবি পরিচালনা এবং প্রজজনাও করেছিলেন ইন্ডিয়ান পিপলস এন্ড থিয়েটার এসোসিয়েশন এরসাথে যুক্ত ছিলেন ( IPTA) সিনে আর্টিস্ট এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন , শিল্পীদের দাবিদাওয়া , জুনিয়র আর্টিস্টদের সুখ দুঃখ নিয়ে সরকারের সাথে অনেকবার আলোচনায় বসেছেন যতদিন আমজাদ খান প্রার্থী ছিলেন ওনার বিপরীতে কেউ কোনদিন প্রার্থী হয়নি গরীব মানুষদের জন্যে বস্তিতে ফ্রিতে চিকিৎসা এবং এমবুলেন্স এর ব্যবস্থা করেছিলেন
অসাধারণ প্রতিভাধর এই অভিনেতা 27 জুলাই 1993 সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad