কিংবদন্তী গায়ক মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাকে ‘চূড়ান্ত রকমের বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে উল্লেখ করেছেন তাঁর ভাইয়ের ছেলে তাজ জ্যাকসন।
মাইকেল জ্যাকসন যদি তাঁর বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগের কথা জানতে পারতেন তাহলে হয়তো তিনি কান্নায় ভেঙে পড়তেন বলে মন্তব্য করেছেন তাজ জ্যাকসন।
সম্প্রতি ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ নামে একটি তথ্যচিত্রে ওয়েড রবসন ও জেমস সেফচাক দাবি করেন যে অনেক বছর আগে শৈশবকালে মাইকেল জ্যাকসন তাদেরকে অনেকবার যৌন হয়রানি করেছিলেন।
সেই তথ্যচিত্রের প্রসঙ্গে তাজ জ্যাকসন বলেন, অভিযোগগুলো ‘বেদনাদায়ক’, কিন্তু জনপ্রিয় এই গায়কের ভাবমূর্তিতে এর দীর্ঘমেয়াদী কোন প্রভান থাকবে না।
“আমি মনে করি এই কলঙ্ক খুবই সাময়িক। সবার আগে আমি বিশ্বাস করি যে সত্যি একদিন বেরিয়ে আসবেই,” রেডিও ওয়ান নিউজবিটকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন তাজ।
“হয়তো খানিকটা সময় লাগবে। এমন হয়েছে যে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তোলা হয়েছে এবং বছর দশেক বাদে সত্যি কথাটার বেরিয়ে এসেছে”।
‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ নামের তথ্যচিত্রটিতে ওয়েড রবসন এবং জেমস সেফচাক দাবি করেন যে মাইকেল জ্যাকসনের হাতে যখন তারা যৌন নিপীড়নের শিকার হন, তখন তাদের বয়স ছিল খুবই কম।
এই দু’জন বলেন যে কয়েক শতবার তারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন, আর সময়কাল ছিলো তাদের সাত থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে।
তাজ বলেন যে, এই অভিযোগ জ্যাকসন পরিবারের জন্য খুবই কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে কারণ তারা ওয়েড এবং তার পরিবারের সবাইকে খুব ভালোভাবে চেনেন।
এসব অভিযোগ শুনে চাচা কেঁদে ফেলতেন এমন উল্লেখ করে তাজ বলেন, “তিনি হয়তো বলতেন, ‘না, ওয়েড না, প্লিজ ওয়েড না’। কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে এসব আগেও ঘটেছে, মানুষ তাঁর সঙ্গে আগেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”
“তাকে নিয়ে আগেও মানুষ গল্প বিক্রি করেছে”।
তাজ জ্যাকসন বিশ্বাস করেন যে ওয়েড তার চাচার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন কারণ তিনি ও জেমস লক্ষ লক্ষ ডলার দাবি করে জ্যাকসন এস্টেটের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। ওই মামলা এখন আপিল পর্যায়ে রয়েছে।
সোমবারে ওপরাহ উইনফ্রে’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েড বলেন, ২০১৩ সালে তিনি যে মামলা করেছিলেন, তা শুধু টাকার জন্য করেননি। বরং নিজের কথা প্রকাশ করার জন্য একটি ‘শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম’ খুঁজছিলেন তিনি।
বিবিসি নিউজবিটকে তাজ বলেন, মাইকেল জ্যাকসন একজন পিডোফাইল বা শিশুদের যৌন নিপীড়নকারী এমন দাবি তিনি গত ২০ বছর যাবৎ শুনে আসছেন।
তিনি বলেন, এটা ‘বেদনাদায়ক যে লিভিং নেভারল্যান্ড তথ্যচিত্রটি তার চাচার পাবলিক ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।
“আমার মনে হয়না যে তাঁর ভক্তরা দূরে সরে যাবে। তবে যারা খুব ভালোভাবে তাকে জানেন না, তারা দূরে সরে যাবেন। আর এটাই বেদনাদায়ক কারণ তারা শুধু একটি দিক দেখতে পাচ্ছেন, তারা শুধু একটি একপেশে তথ্যচিত্র দেখছেন”।
তাজ অবশ্য স্বীকার করেন যে তিনি জানতেন মাইকেল জ্যাকসন অল্প বয়সী ছেলেদের সঙ্গে বিছানায় ঘুমাতেন এবং এমন ছেলেদের একজন ছিলেন তিনি নিজে।
“আপনি যখন তাঁর কাছাকাছি থাকতেন, আপনি জানতেন তাঁর হৃদয় ছিলো পরিশুদ্ধ। এমনকি তিনি ওসব কিছু ভাবতেন না পর্যন্ত।”
তিনি বলেন, “তাঁর জন্য এটা অদ্ভুত কোন ব্যাপার ছিলো না। কিন্তু অন্যদের জন্য ছিলো। মাইকেল জ্যাকসনের মতো কেউই ছিলেন না।”
তাজ জ্যাকসন জানান যে লিভিং নেভারল্যান্ড তথ্যচিত্রটির দাবি মাইকেল জ্যাকসনের ছোট ছেলেকে “ভয়ঙ্করভাবে” ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।
“তার বয়স ১৭ বছর, স্কুলে যায়, খুব হাসিখুশী এবং প্রচুর কথা বলে। কিন্তু তার একজন শিক্ষক ফোন করে জানিয়েছে যে সে এখন একেবারে কথা বলছে না, যার মানে হলো এটি তাবে দারুনভাবে প্রভাবিত করেছে”।
‘চ্যানেল ফোর’ টেলিভিশনে বুধবার তথ্যচিত্রটি প্রচার শুরু হয়েছে। তাজ বলছেন যে তিনি এটির দ্বিতীয় অংশটি দেখেছেন এবং যারা ওয়েড ও জেমসকে চেনেন না তারা তাদের ভাষ্যকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করতে পারেন।
“আমার চাচাকে যারা চিনতেন তারা এখন ক্ষিপ্ত। আমি সেই সব সাবেক কর্মীদের কথা বলছি, যারা চাকরি হারিয়েছিলেন। তারা এখনো তাঁর পক্ষে কথা বলছেন, কারণ তারাই চিনতেন আসল মাইকেল জ্যাকসনকে।”
তিনি বলেন, “খুব বিশ্বাসযোগ্যভাবে এটি করা হয়েছে। পরিচালক চমৎকার একটি কাজ করেছেন। আমি একজন পরিচালক, তাই আমি ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল বুঝতে পারছি, স্লো মোশন দেখছি, ক্লোজ আপ দেখছি, ক্যামেরা উঁচু থেকে এমনভাবে ধরা হয়েছে যে তাদেরকে খুব অরক্ষিত মনে হচ্ছে।”
“খুব চমৎকার হয়েছে। কিন্তু একই সাথে এটিও বলতে হয়, এর মানে এই নয় যে এসব কিছু সত্যি”। সূত্র- বিবিসি বাংলা।
No comments:
Post a Comment