প্রমাণ চাইছেন ! আপনি কার পক্ষে ? দেশের পক্ষে , নাকি পাকিস্তানের পক্ষে ? আপনি কি পাকিস্তানের কন্ঠস্বর ? " বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনার কড়া জবাব দিয়ে এমন প্রশ্ন তুললেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা ৯০ হাজার পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দি সেনাকে নিঃশর্তে মুক্তি দিয়েছিলাম।সেখানে আমাদের একজন বৈমানিককে আইন মেনে ওরা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ।আর আমাদের এখানকার কেউ কেউ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্য ধন্য করছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ভারতের কংগ্রেসের সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী, এ কাজে তিনি তখন সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলেন কিন্তু আজকের দিনে বিরোধী দলগুলি সরকারের সব কাজেই সন্দেহ প্রকাশ করে। তৃণমূল কংগ্রেস, জাতীয় কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলিকে তোপ দেগে এই মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। রবিবার সন্ধ্যায় সল্টলেকের ইজেডসিসি মিলনায়তনে ‘এনসিওরিং ইন্ডিয়াস ন্যাশনাল সিকিউরিটি’ শীর্ষক এক আলোচনা চক্রে যোগ দেওয়ার ফাঁকে সীতারামণ এসব কথা বলেন।
গত ফেব্রুয়ারী মাসে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জির প্রশ্ন তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হয় মমতার ওই ধরনের মন্তব্যে পাক মদদপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলি উৎসাহিত হবে কি না? সেপ্রশ্নের উত্তরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন ‘অবশ্যই। ওই মন্তব্যের ফলে একদিকে যেমন আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবলে ধাক্কা লাগবে উল্টোদিকে পাকিস্তানের মাটি থেকে যে সমস্ত শক্তিগুলি ক্রমশ ভারত বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে তারা উৎসাহিত হবে। তাই দেশের বিরোধী দলগুলি যে ধরনের মন্তব্য করে চলেছেন তাতে ভারতের কোন ভাল হবে না। বরং এখানে আমি আপনাদের একটা ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে বাংলাদেশ স্বাধীনের জন্য ১৯৭১ সালে যখন ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হয়-তখন দেশের স্বার্থে অটল বিহারী বাজপেয়ী কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের সাথে ছিল, কেন্দ্রের সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। কারণ আমাদের দলের বা ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থ অনেক বেশি বড় ছিল। সেসময় ভারতের কেন্দ্রে এই ধরনের বিরোধী দল ছিল কিন্তু এখন আমাদের যে বিরোধীদলগুলি আছে, তারা সরকারের সবকিছুতেই সন্দেহ প্রকাশ করে।’
মমতাকে তোপ দেগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন ‘আগামী দিনে দেশের মাটিতে জঙ্গি হামলা ঠেকাতে ওই এয়ার স্ট্রাইকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আপনারা জানেন যে জঙ্গি হামলা যে কোন সময়েই ঘটতে পারে এবং সেধরনের হুমকিও রয়েছে। কিন্তু আমরা যদি এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ না নিই-আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে ৪০ জন জওয়ান নিহত হয়েছেন। আর এই কারণেই জঙ্গি আশ্রয় শিবিরের বিরুদ্ধে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। অথচ এটা খুবই বিস্ময়কর ঘটনা যে একটি সাংবিধানিক পদে থেকে মমতা ব্যনার্জি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রমাণ চাইছেন।’
সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে জাতীয় কংগ্রেস-কেও নিশানা করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী। কয়েকদিন আগেই জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাক মদদপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জয়শ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে কালো তালিকাভুক্ত করার প্রয়াসে চিনের তরফে বাধা দেওয়ার পর ভারতের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। সেই প্রেক্ষিতে নির্মলা সীতারামণ বলেন ‘বিরোধীরা বিশেষ করে কংগ্রেস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয় নি। ইউপিএ সরকারের আমলে মুম্বাই হামলার পর সন্ত্রাসবাদীদের বিরদ্ধে কোন কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি-ওই ঘটনা আমাদের সকলকেই ব্যথিত করেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বর্তমান ভারত সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিশ্বের সমগ্র দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সাথে কথা বলে পাকিস্তানকে একঘরে করার প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদীদের রিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পাক সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফল হিসাবে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা এবং তার পর এলওসি পেরিয়ে পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এয়ার স্ট্রাইক-এর পর গোটা বিশ্ব আমাদেরকে সমর্থন দিয়েছে। তাই কংগ্রেস যদি এই ধরনের প্রশ্ন করে তবে আমিও তাদের প্রশ্ন করবো যে তারা কি এভাবে ভারতের ক্ষতি করতে চাইছে। ডোকলামের ঘটনার পরও চিনের রাষ্ট্রদূতের সাথে কংগ্রেসের নেতারা গোপনে বৈঠক করেছেন। তাই একটি রাজনৈতিক দল যদি ক্রমাগত ভারতকে নিচু করতে থাকে তবে তাদের প্রশ্ন করার কোন যৌক্তিকতা আছে?
No comments:
Post a Comment