সংরক্ষণের অভাবে ধুঁকছে একাত্তরের স্মৃতি আগলে থাকা সেই নীল বাড়ীটি - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, 18 December 2020

সংরক্ষণের অভাবে ধুঁকছে একাত্তরের স্মৃতি আগলে থাকা সেই নীল বাড়ীটি


নিজস্ব সংবাদদাতা, দক্ষিণ দিনাজপুর:  দীর্ঘ ৪৯ বছর পর কেন্দ্র শীত ঘুম ভেংগে ১৯৭১-এর বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধের সোনালী অধ্যায়ের রঙ ফেরাতে বিএসএফ-এর তরফে হিলিতে বিজয় দিবস মহা সমারোহে বুধবার যখন পালন করলো, ঠিক তখন সেই  সময়ের রাতের অন্ধকারে গোপনে হিলিতেই  ভারত- বাংলাদেশের মিলিত  স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিদ্ধজনরা যে ঘরটিতে বসে মুক্তি যুদ্ধের " রূপ রেখা " তৈরি করেছিল, আজ সেই  স্মৃতি বিজড়িত পাক সেনার গুলিতে ক্ষত বিক্ষত বিজড়িত  নীল রংগের টিনের বাড়ীটি সংরক্ষনের অভাবে অবহেলিৎ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পাক-ভারত যুদ্ধে  হিলির আত্মত্যাগ ও বলিদানের স্বর্নালী  অধ্যায়  সংরক্ষনের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে কোন পদক্ষেপ না গ্রহন করায় ক্ষুদ্ধ হিলি বাসী। যদিও হিলির বিশিষ্ট  সমাজসেবী ও বংগভূষন প্রাপ্ত  অমূল্য রতন বিশ্বাস  নিজ উদ্যোগে তা কিছুটা  রক্ষনাবেক্ষন করে সংরক্ষনের ব্যবস্থা করেছেন। নইলে হয়তো এতদিনে আধুনিককীরণের ঠেলায় তাও লোপ পেত।


১৯৭১ সালে ভিন্ন রাষ্ট্রের দাবীতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষরা। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে তুমুল আন্দোলন, সংঘর্ষ চলছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের সেনারা পূর্ব পাকিস্তান দখল করে আক্রমণ শুরু করে। বাংলাদেশের দাবীতে অনড় পূর্ব পাকিস্থানের নেতাদের সমূলে বিনাশ করতে তৎপর পশ্চিম পাকিস্তানের সেনারা। সেই সময়ও ভারতের পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি। ঠিক সেই সময় দেশভাগ ঠেকাতে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনারা শেল, মাটার, স্পিনটার, গুলি ছোড়ে আন্দোলনকে রণেভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। সেই শেল, মাটার, স্পিনটার, গুলি এসে পড়তে থাকে তৎকালীন পশ্চিম দিনাজপুরের হিলি সহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। কার্যত শেলের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় হিলি স্থলবন্দর সংলগ্ন এলাকার নীল রঙা বিশালাকার টিনের তৈরি বাড়িটি। গোলা, বারুদের ধোঁয়াটে গন্ধ এখন নেই তবে মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী রয়েছে ওই কুঠির। আঘাতের যন্ত্রণা কাটিয়ে ৪৯ বছর আগের ইতিহাস বহন করে চলছে বাড়ীটি। কালক্রমে সেই বাড়ীটি এখন স্মৃতির ভারে বৃদ্ধ। তবে, ইতিহাসকে সংরক্ষিত করায় ব্রতী হয়েছেন বাড়ীটির মালিক।

৪৯ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধের শেল, মাটার, স্পিনটার, গুলির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ওই বিশালাকার শতাব্দী প্রাচীন নীল টিনের বাড়ীটি আজও স্বমহিমায় বিরাজ করছে স্থলবন্দরের পাশেই। একাত্তরের ইতিহাসকে সংরক্ষিত করতে বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন বাড়ীটির বর্তমান মালিক তথা সমাজসেবী বঙ্গরত্ন প্রাপ্ত অমূল্য রতন বিশ্বাস। তবে, ইতিহাস সংরক্ষিত হয়নি বলে আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে স্থানীয় সকলের। তাঁদের দাবী, হারিয়ে যাওয়ার আগেই সংরক্ষিত করুক সরকার।


এ প্রসঙ্গে বাড়ীর মালিক তথা সমাজসেবী বঙ্গরত্ন প্রাপ্ত অমূল্যরতন বিশ্বাস বলেন, ‘একাত্তর সালের লক্ষ্মীপুজো পরবর্তী সময়ের ঘটনা। বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনের সময় পশ্চিম পাকিস্তানের রাজকররা শেল ফেলে। শেলের আঘাতে বাড়ির দেওয়াল ক্ষতবিক্ষত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এই ক্ষতগুলি ওতঃপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ঐতিহাসিক সাক্ষর বহন করে সেই কারণে ক্ষত চিহ্নগুলি সংরক্ষিত করে রেখেছি। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ সব ক্ষেত্রেই হিলি বহু ইতিহাস বহন করে চলেছে। কিন্তু কখনও এইগুলি ইতিহাস সংরক্ষিত করার জন্য কাউকে আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখেনি। দেশের জন্য যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন তাঁদের যথাযোগ্য সম্মান জানিয়ে ইতিহাসকে তুলে ধরা প্রয়োজন।’


জেলার ইতিহাস গবেষক ও বিশিষ্ট শিক্ষক ও জেলার হেরীটেজ সোসাইটির সদস্য সমিত ঘোষ তাদের সোসাইটির পক্ষ থেকে এই মুক্তি যুদ্ধের স্মৃতিজড়িত  বাড়ীটি সংরক্ষিত করবার দাবী যথাযথ স্থানে তুলবেন বলে জানান। পাশাপাশি তার দাবী ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষনা করেন বাড়ীটি সংরক্ষন হলে যেমন তাদের কাজে সুবিধে হবে। তেমনি ভবিষ্যৎ  প্রজন্মও বাংলাদেশ জন্মে ভারত তথা হিলির আত্মত্যাগের বিষয়টি জানতে পারবে।


যদিও হিলি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আশু সাহা জানিয়েছেন, বাড়ীটি সংরক্ষন হওয়া প্রয়োজন, হিলির মানুষের মুক্তিযুদ্ধের সময় তারাও যে সামিল হয়েছিলেন তা জানা সবার দরকার। তিনি জানান তাদের সীমিত ক্ষমতা, তবে তাদের কাছে কেউ এই দাবী জানালে তারা তাদের উচ্চস্থলে বিষয়টি জানিয়ে তা পূরনের জন্য দরবার করবেন বলে জানান।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad