চৌধূরীর বাড়ির দুর্গাপূজা, বোধন থেকেই! পঞ্চমুণ্ডির আসনেই পুজো! - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, 23 September 2019

চৌধূরীর বাড়ির দুর্গাপূজা, বোধন থেকেই! পঞ্চমুণ্ডির আসনেই পুজো!




দেবশ্রী মজুমদারঃ    জমিদার চৌধূরীর বাড়ির দুর্গাপূজা। বোধন থেকেই! ঢাক ঢোল কাঁসর ঘন্টা সহকারে পুজো। চলে নিত্য চণ্ডীপাঠ।  প্রশান্ত চৌধূরী সারা বছর পুজো ও চণ্ডীপাঠ করে থাকেন। দুর্গাপুজোর সময় ষষ্ঠীর দিন পুজো হওয়ার পর নৈবেদ্য আতপ চাল এক পাকে রেঁধে রাতে আহার হিসেবে গ্রহণ করেন। তারপর একেবারে নবমীর দিন পূর্নাহূতির পর অন্ন গ্রহণ করেন তিনি। 


তবে এই পুজোর বৈশিষ্ট  হল  কোন মূর্তি পুজো হয় না। এক বিশাল বেদীর পুজো হয়। এই বেদীমূলে ১০৮টি নরমুণ্ড থাকায়  তন্ত্র সাধনায় পঞ্চমুণ্ডির সাধন স্থান হিসেবে এর মাহাত্ম্য আছে। বেদীর উপর সুতির লাল পেড়ে কাপড় পড়ানোর রীতি আছে। কেউ নিয়ম ভাঙতে চায় না, দেবীর অসন্তুষ্টির ভয়ে।  তাই নিত্য পূজা ও চন্ডীপাঠ হয়ে থাকে এখানে। এই দুর্গা পূজার আরেকটি বৈশিষ্ট হল দশমীর দিন দৃষ্টি নন্দন ঘট বিসর্জনের দৃশ্য। প্রথা মাফিক গ্রামের ভদ্রকালী মন্দিরের ঘট অপেক্ষা করে এই দুর্গামন্দিরের সামনে।



 তারপর চৌধূরী বাড়ির ঘট ভদ্রকালীর ঘটকে সাথে নিয়ে এগোতে থাকে। একসাথে গ্রামের বারো তেরোটি পূজার ঘট তাদের অনুসরণ করে। শেষে গ্রামের ব্রহ্মাণী নদীতে সেই ঘট বিসর্জন হয়। গ্রামের এয়োস্ত্রীরা এই সময় সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে। সেই সময়  অবশ্য পুরানো কাপড় পড়ার রীতি। যাইহোক, লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে চারিধার। গ্রামের গৃহবধূ দেবী চট্টোপাধ্যায়রা জানান, কুড়ি বছর আগে এই গ্রামে বউ হয়ে এসেছি। এই পুজোয় খুব ধুমধাম করেই পুজো হয়। খুব আনন্দ করে সবাই।     



 গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা সুপ্রীয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, সাড়ে তিনশো বছরের বেশি পুরানো এই পুজো।  তখন ষোড়োশোপচারে রাজসিক দুর্গাপূজার ছিল দেখবার মত। ওই তল্লাটে আর কোথাও হত না। বোধন থেকে দুর্গা পূজা শুরু। শেষ হতো দশমীতে।  তবে আজও ঐতিহ্য মেনেই জমিদার বাড়ির এই পুজো হয়। জমিদার বংশের একমাত্র বংশধর তথা জমিদার হরি চৌধূরীর প্রপৌত্র প্রমোদ চৌধূরী বলেন,  আজ হয়ত নামেই তালপুকুর। ঘটি ডোবে না। কিন্তু একসময় জমিদার  চৌধূরী বংশের দাপট কম ছিল না।


জমিদার হরি চৌধূরীর কোন এক পূর্বপুরুষ মহারাজ  নন্দকুমারকে বহরমপুরের কুঞ্জ ঘাটা থেকে এই ভদ্রপুরে নিয়ে আসেন।  সেই বংশের বর্তমান বংশধর অর্থাৎ আমার পিতা প্রশান্ত চৌধূরী এই পুজো চালিয়ে আসছেন। আগে বৈভব ছিল। বাপ ঠাকুর্দার কাছে শোনা বোধনের সময় নহবত বাজত। পুজোর চারদিন গ্রামের মানুষকে পাত পেড়ে খাওয়ানো হত। এখন সাধ থাকলেও, সাধ্য নেয়। আগে সব দিন পাঁঠা বলি হত। এখন শুধু অষ্টমীর সন্ধি পুজোতে ছাগ বলি হয়। তবে ঐতিহ্য মেনেই পুজোর চারদিন গ্রামের মানুষ যারা আসেন তাদের লুচি ফল মুল প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়।



পি/ব 

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad