প্রেস কার্ড নিউজ ডেস্ক ; পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে পান্ডবেশ্বরের কুমারডিহি গ্রামের রায়চৌধুরী পরিবারে। পুজো আসছে এখনো ১১ দিন বাকি। তার আগেই দেবী দুর্গার বোধন হয়ে গেছে। নিয়ম অনুসারে আদ্রা নক্ষত্রের কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে বোধনের পর এখানকার দশভুজার আরাধনা শুরু হয়। তারপর একটানা ষোলো দিন ধরে পূজার রীতি চালু আছে ।
সেই অনুযায়ী এবারেও মহালয়ার আগেই এখানে শুরু হয়ে গিয়েছে দুর্গাপুজো। এভাবে মহালয়ার আগে শুরু হয়ে ষোলো দিন ধরে দুর্গা বন্দনার নজিরবিহীন রীতির জন্যই বিখ্যাত রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজো। এই পরিবারের একই সঙ্গে পৃথক দুটি দুর্গা প্রতিমার পুজো হয়। এই দুর্গার একটি ‘বড়মা’ , অন্যটি ‘মেজো মা’ নামে পরিচিত। মেজ মার পাশেই বিরাজ করেন বন্দোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গা ‘ছোটমা’ ।
কুমারডিহি বড় থান পাড়ায় পৃথক তিনটি মন্দিরে বিরাজ করেন তিনটি দুর্গা প্রতিমা। এখানে চিরাচরিত দুর্গাপূজার মাঝখানে যেন এক অচেনা পুজোর রূপ। চারপাশে যখন বাঙালীর সেরা উৎসবের আয়োজন চলছে, পুজোর দিন গোনা শুরু হয়েছে, তখন কুমারডিহিতে দেবী দুর্গার শুরু হয়ে গিয়েছে পুজো। সেই দুর্গাপুজোকে ঘিরে গোটা গ্রাম মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্য অভিষেক রায় চৌধুরীর কাছে জানা গিয়েছ, বড় মায়ের পুজো সবথেকে প্রাচীন, আনুমানিক ৫০০ বছর পূর্বে এই পুজো শুরু হয়।
তারপর মেজো মা ও ছোট মায়ের পুজো শুরু হয়। পুজোর অতীত ইতিহাস নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। এই মন্দিরের পুরোহিত সন্ন্যাসী গোস্বামী জানান, তৎকালীন জমিদার বীরেন্দ্র নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে এই পুজো শুরু হয়। তার বংশধর রাজনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় রায়চৌধুরী উপাধি পেয়েছিলেন। ইতিহাস বলছে রাজা ইলিয়াসের কাছ থেকে তিনি সেই উপাধি পান । পুজোগুলি ঘিরে অনেক প্রাচীন রীতি চালু আছে। তার মধ্যে অন্যতম নহবত বসানোর রীতি।
তিনটি পুজোকে ঘিরে প্রথম দিন থেকেই বসে নহবত। নহবত বসার জন্য মন্দিরের সামনেই নির্দিষ্ট জায়গাও করা আছে। ‘ বড়মা র’ পুরোহিত সন্ন্যাসী গোস্বামী জানান, ষোড়শোপচারে এখানে পুজো হয়। এটি প্রথম কল্পের পুজো বলে পরিচিত। পূজো উপলক্ষে অন্নভোগ, চণ্ডীপাঠ, রামায়ণ গান হয় নিত্যদিন। বড় ও মেজো মায়ের পুজোয় পঞ্চবলির প্রচলন আছে। অর্থাৎ এখানে ছাগল, মোষ, মেষ, আখ ও চালকুমড়ো এই পাঁচ রকমের বলি হয়।
অষ্টমীতে মোষ ও দশমীতে মেষ বলি হয়। আর ছোট মায়ের পুজোয় শুধু ছাগল বলি হয়। এখানে বড় দোলা ও ছোট দোলা করে নবপত্রিকা আনার রীতি আছে। গ্রামের শায়ের নামক পুকুর থেকে নবপত্রিকা আনা হয়। ষোলো দিনের পুজোয় একটানা ঘৃত প্রদীপ চালানো হয়। আশপাশের বহু গ্রামের মানুষ এই পুজোয় ভিড় জমায়।
পি/ব
No comments:
Post a Comment