দেবশ্রী মজুমদারঃ পলাশীর যুদ্ধে কাশ্মীরি মোহন লালের কথা মনে পড়ে? বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার একান্ত অনুগত সিপাহসালার ছিলেন। তাঁর বোনের নাম ছিল মাধবী। তার ডাক নাম ছিল হীরা। এই হীরার সাথে ছিল সিরাজের প্রণয়। গোপন সম্পর্ক গোপন থাকে নি দাদু আলিবর্দীর কাছে। শেষে হীরা হন আলিয়া বিবি। প্রেমের এমন কাহিনী কখনও এক তরফা হয় না! হলেই ঘটে অপমৃত্যু!! এমন না হলেও কিছুটা মেলে ফ্রান্সের ওভারনিয়া সাসাইডো প্রাসাদ দুর্গে। সাসাইডো প্রাসাদ দুর্গে বাস করতো লুসি নামে এক তরুণী।
এই দুর্গ নির্মিত ৮০০ দিকে। এখানেই অপমৃত্যু ঘটে লুসির। তার পর থেকে একটানা ১৫৬০ সাল পর্যন্ত লুসিকে দেখা গেছে এই প্রাসাদ দুর্গে। ব্যারন গাই ডিয়েলনের চাকরানী ছিল লুসি। বয়সে অনেক বড় হলেও ব্যারন তার প্রেমে পড়ে যান। লুসি ভয়ে মুখে কিছু বলতে না পারলেও, নাছোড়বান্দা ব্যারনের ব্যাপারে ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতো সে। লুসির মূল আপত্তি ছিল ব্যারনের অধিক বয়স। একবার ব্যারন যুদ্ধে বেরিয়ে গেলেন, তখন ব্যারনের স্ত্রী জ্যাকুলিন দ্য ল্যাফায়েত টাওয়ারে নিক্ষেপ করেন।
সেখানেই ক্ষুধা তৃষ্ণায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর টাওয়ারের দেওয়ালে লুসিকে কবরস্থ করা হয়। ১৯৮০ সালে এই দুর্গের মালিক এফরাম টাগোরি ডে লা টুর লুসির প্রেতাত্মাকে চাক্ষুষ করেন। তার পর এই ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবে এই দুর্গের আরও পরিচিতি লাভ করে। শোনা যায়, এই ভূত মধ্য রাতে বেরিয়ে বিভিন্ন ঘরে যাতায়াত করে। ১৯৮৪ সালে আধিভৌতিকের একটি দল এই ঘটনার সন্ধানে সাসাইডোতে যায়। তারা সবাই ঘটনার চাক্ষুষ করেন।
তাঁদের সাথে প্রাসাদের মালিকের ১২ বছর বয়সী নাতনিও হাজির ছিল। ২০০২ সালে এই দুর্গের হাত বদল হয়। তার পর মালিকানা পান এলিজাবেথ মিন্সার। তিনি বলেন, এই গল্প শুনেছি গ্রাম বাসীদের কাছে। লুসি বুড়ো ব্যারনকে বিয়ে করতে চায় নি। তাই বিয়ের ভয়ে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। শোনা গেছে, এক ভাড়াটিয়া ঘরে শোয়ার জন্য ঢুকতে গেলে দেখে এক যুবতী বিছানায় শুয়ে আছে। ছুটে গিয়ে মিন্সার কে নিয়ে ফের ঘরে এসে অবশ্য আর তাকে দেখা যায় নি। তার পরের দিনই সেই ভাড়াটিয়া ব্যাগ গুছিয়ে পালান। ২০১৪ সালেও এই আধিভৌতিক দল সেখানে যাওয়ার পর লুসিকে দেখে। লুসির অশরীরী অতৃপ্ত আত্মা আজও ঘুরে বেরায় প্রাসাদের অলিন্দে!!
মনে করিয়ে দেয় ক্ষুধিত পাষাণের কাহিনী। একজায়গায় কথক বলছেন, যেন আমার খাটের নীচে, মেঝের নীচে, এই বৃহৎ প্রাসাদের পাষাণভিত্তির তলবর্তী একটা আর্দ্র অন্ধকার গোরের ভিতর হইতে কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলিতেছে, ‘ তুমি আমাকে উদ্ধার করিয়া লইয়া যাও — কঠিন মায়া, গভীর নিদ্রা, নিষ্ফল স্বপ্নের সমস্ত দ্বার ভাঙিয়া ফেলিয়া, তুমি আমাকে ঘোড়ায় তুলিয়া, তোমার বুকের কাছে চাপিয়া ধরিয়া, বনের ভিতর দিয়া, পাহাড়ের উপর দিয়া, নদী পার হইয়া তোমাদের সূর্যালোকিত ঘরের মধ্যে আমাকে লইয়া যাও। আমাকে উদ্ধার করো। '
পি/ব
No comments:
Post a Comment