দেবশ্রী মজুমদারঃ ট্রেণ্ডি বাজার যাবেন? স্টাইল বাজার? কিম্বা কসমো? যে কোন শপিং মল সানঘাটা পাড়া থেকে ব্যাঙ্ক রোড হয়ে দেশবন্ধু রোডে যান, একটাই নাম প্লাজো, মন মাতানো সাজো! পারলে কামারপট্টি ছাড়িয়ে রঙ্গোলিতে যেতে পারেন! যদি পুরানো অভ্যেসে সায় দিয়ে হাটতলা বা ধারেপাশের দোকানেও ঢুঁ মারেন, সেই এক নাম প্লাজো! এই যা! জায়গার নামটাই তো বলতে বেমালুম ভুলে গেছিলাম। রামপুরহাট!! হালফ্যাশনে ওয়াকিবহাল শহর! তবে অনলাইনেও মনপসন্দ প্লাজোর চাহিদাও কম নয়! কিন্তু প্লাজো কেন? প্রথমে এর মনমোহিনী কারণটি বলি।
এখানে তো আপ্যায়ন আলাদা! দোকানদার বললেন, শাড়ি যা নেবেন, নেবেন। একটা কুর্তি প্লাজো নেন! তাই তোমার দোকানেও! দেখি? হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঝুল ওয়ালা প্রিন্টের কুর্তি আর তার সাথে এক কালারের প্লাজো। --আচ্ছা, এটা ফ্রি সাইজ তো? প্রশ্ন করতেই দোকানের কর্মচারী বলল--- ডবল এক্স এল।
দাম রেঞ্জ ৬৫০-৭০০র মধ্যে। দোকানে চেঞ্জ রুম নেই। বাড়ি ফিরে এই কুর্তি প্লাজো পরে মিঃ দাসের সামনে দাঁড়াতেই আরেক বার মাথা ঘুরে গেল তাঁর। ভালো করে দেখে তিনি তো থ। -- গিন্নি বললেন, কেমন মাঞ্জা বলো? মিসেস দাসের গায়ের রং ফর্সা হলেও, নাকটা কুলোর মত ( মনে মনে বলেন সুর্পনখা)।
কিন্তু এই পোশাকে হেব্বি জেল্লা দিয়েছে মানতে হলো তাকে! নারী সৌন্দর্য শুধু বিজ্ঞাপন নয়! সে কথাই বাজারি বাজারি লাগে। যে কোন তত্ত্ব নিয়ে কথা বলুন না কেন, কিন্তু তাতে একটু বাম গন্ধ না থাকলে, নাকে কটু লাগে। বর্তমানে, এই নতুন তত্ত্বের নাম-- "সোশিওলজি ইন দ্য বডি"। অর্থাৎ নারী সেজে থাকে পরহিতার্থে। পুরুষ সেখানে ক্রেতা ও ভোক্তা। কেউ কেউ উপভোক্তা। এই তত্ত্ব বামপন্থার। সে ফুকো সাহেবের কথা বলুন, আর যাই বলুন। সমালোচনা করে বামপন্থা একেই কনজ্যুমারিজম বলে। যদি মার্কসীয় দাস ক্যাপিটাল থেকে শিক্ষা নিই, তাহলে বলতে হয়, এই নারীরা শ্রমজীবী।
এবং শোষিত। ক'জন বা ধন্যবাদ টুকু দিই! শ্রমের কথা ধরলে, নিজের দেহকে অবয়ব, নাকের সঙ্গে মানানসই চুলের কাট, মুখের প্যাক, তারপর সব শেষে পোশাক। হাড়ভাঙা খাটুনি। কাদের জন্য? সাহিত্যও ভুড়ি ভুড়ি উদাহরণ আছে মহিলাদের সাজ পোশাক নিয়ে। ( শেষের কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় ধরি না-- “এ দিকে ওর দুই বোন, যাদের ডাকনাম সিসি এবং লিসি, যেন নতুনবাজারে অত্যন্ত হালের আমদানি– ফ্যাশানের পসরায় আপাদমস্তক যত্নে মোড়ক-করাপয়লা নম্বরের প্যাকেট-বিশেষ। উঁচু খুরওয়ালা জুতো, লেসওয়ালা বুক-কাটাজ্যাকেটের ফাঁকে প্রবালে অ্যাম্বারে মেশানো মালা, শাড়িটা গায়েতির্যগ্ভঙ্গিতে আঁট করে ল্যাপ্টানো।
কবি পুর্নেন্দু পত্রীও এই সাজপোশাক নিয়ে নিজের ভাব প্রকাশ করেছেন এক অনবদ্য কবিতায়। আর সেটিই শেষ পদে মিষ্টি---
স্বাধীন চডুই-এর মতো যখন যে-রকম খুশি পোশাক-পরিচ্ছদে ঢুকে পডুক।
রমণীদের এত ভালো লাগে এ জন্যেই । প্রতিনি নতুন। আলাদা আলাদা।
যেদিন সবুজ শাড়ি, যেন ঘাড়ের কাছে ঝুঁকে-পড়া লতানো জুই-এর ডাল
হাত ধরে ডেকে নিয়ে যাবে ঝাউবনের গোপন আঁধারে,
আগুনের উল্কি এঁকে দেবে হাতে, বুকে। দাঁতে চিবোতে দেবে লাল লবঙ্গ।
যেদিন লাল শাড়ি, কোমরের ঢাল থেকে উকি মারে তুর্কি ছোরার বাঁট।
কমলারঙের ছাপা শাড়ি যেদিন, বুঝতে পারি এই সেই চিতাবাঘ
মোলায়েম ঊরুর উপর শুইয়ে যে আমাকে চেটে-পুটে খাবে এখন ।
পি/ব
No comments:
Post a Comment