কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, 29 August 2019

কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ




দেবশ্রী মজুমদার:   তারাপীঠ কোন সতী পীঠ। নয়। সিদ্ধ পীঠ। দক্ষ যজ্ঞের সময় বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রে সতীর দেহ বিচ্ছিন্ন হয়ে তার কোন অংশ তারাপীঠে পড়ে নি। কথিত, সুদূর চিনে দেবীর চোখের তারা পড়েছিল। বশিষ্ঠ মুনি সেই তারা, যা বর্তমানে একটি প্রস্তর খণ্ড হিসেবে প্রদর্শিত, তারাপীঠে আনয়ন করেছিলেন বশিষ্ঠ মুনি। তাই বশিষ্ঠ আরাধিতা তারাও অনেকেই বলে থাকেন।


 কিন্তু, তাতেও তারা মায়ের এত নাম ডাক বহরে বাড়ে নি। যতদিন বামাখ্যাপা তারাপীঠের শশ্মানে এই দিনটিকে তারা মায়ের সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেন। এই কৌশিকী অমাবস্যা তাই তন্ত্র সাধনার বিশেষ দিন। আর এই কারণেই, এই বিশেষ দিনটিতে তারাপীঠে  এত ভক্ত সমাগম। তারাপীঠে দ্বারকা নদীতে কুম্ভ স্নানে সবাই হাজির হয়। লাল পোশাক পড়ে হাতে ধাতব ঘটি নিয়ে মায়ের নাম মুখে নিয়ে হাজির তারাপীঠে। মায়ের পূজা যথারীতি হয়। কিন্তু শশ্মান হয়ে ওঠে তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান।


 তিথি নক্ষত্র মিলিয়ে ঠিক কাঁটায় কাঁটায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে যজ্ঞ। কেউ করবেন গৃহ শান্তির যজ্ঞ। কেউ বশীকরণ। আবার কেউ কাটাবেন দোষ। গোটা রাত তন্ত্র সাধনার হওয়ায় অভিজ্ঞতা হবে বিচিত্র। কেউ ব্লেডে বুকের কাছে সামান্য চিরে জবা ফুলে সিক্ত করে ওঁ ফট স্বাহা:  উচ্চারণ করে যজ্ঞকুণ্ডে নিবেদন করবেন। মন্ত্রপূত কারণ বারি ছেটাবেন দেহে। মুক্ত মদ্যপান চলে এই সময়। তাই সাবধান থাকতে হয় প্রশাসনকে।   


এব্যাপারে তারাপীঠ মন্দির সেবায়েত কমিটির সদস্য ও পুরোহিত তথা গবেষক লেখক প্রবোধ কুমার বন্দোপাধ্যায় বলেন,  মহিষাসুর বধের পর শুম্ভ-নিশুম্ভের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন স্বর্গের দেবতারা। শেষে দেবতারা মহামায়ার তপস্যা শুরু করেন। সেই তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী নিজ কোষ থেকে উজ্জ্বল জ্যোতি বিচ্ছুরিত করে এক পরমাসুন্দরী দেবী মূর্তিতে আবির্ভূত হন। নিজ কোষ শরীর থেকে বের হওয়ার জন্য তিনি হলেন কৌশিকী। কৌশিকীদেবী আবার তারা ও কালীতে রূপান্তরিত হন।



 আবার শোনা যায় কৌশিকী অমাবস্যার দিন তারাপীঠ মহাশ্মশানের শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলায় সাধক বামাক্ষ্যাপা সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। ফলে ওই দিন মা তারার পুজো দিলে এবং দ্বারকা নদীতে স্নান করলে পুণ্যলাভ হয় এবং কুম্ভস্নান করা হয়। এই বিশ্বাসে আজও ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ওই দিনটিতে তারাপীঠে ছুটে আসেন।     


গতবছর পাঁচ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল। তার মধ্যে রেলপথেই এসেছিলেন প্রায় চার লক্ষের বেশি মানুষ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় লাগছে অমাবস্যা। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটা অবধি থাকবে অমাবস্যা। মঙ্গলবার থেকে যে হারে লোক এসেছে। তার থেকে অনেক বেশি পূন্যার্থী আসতে শুরু করেছে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই। কোন লজ ফাঁকা নেই।



এই সুযোগে দামও হাঁকিয়ে নিচ্ছে তারা। তারাপীঠ মনসুবা রুটে বেশি যানযট। কিন্তু প্রশাসন ইচ্ছে করলে মৌলো আটলা দিয়ে ওয়ান ওয়ে অর্থাৎ প্রবেশ কিম্বা নির্গমন করতে পারতো। তাহলে ভিড় কম হতো। বামাখ্যাপার জন্ম স্থান আটলার গুরুত্ব অনেক বাড়তো। যদিও এব্যাপারে প্রশাসন মুখ খুলতে নারাজ।



পি/ব 

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad